গোপালের ঘরে চুরি করতে গিয়ে এক চোরকে ভীষণ বিপদে পড়তে হয়েছিল।
গোপাল তখনও পাকাবাড়ি করতে পারেনি।মাটির দেওয়াল, টালির ছাউনি। আগে গ্রাম-দেশে চোরেরা সচরাচর হয় সিঁধ কাটত, নতুবা ঘরের চালের দু’একখানা টালি সরিয়ে ঘরে নেমে মালপত্র নিয়ে অন্য দরজা দিয়ে পালিয়ে যেত। তখন মাঝরাত, একটা চোর চুরি করবে বলে গোপালের ঘরের টালির উপর সবে উঠছে। গোপাল এবং গোপালের স্ত্রী তখনও জেগে ছিল। চোর সবে একখানা টালি সরিয়েছে, আর একখানা সরিয়ে নিচে নামবে আর কি। গোপাল টের পেয়ে তখন স্ত্রীকে সাবধান হতে বলল।
অন্যদিকে গোপালের বাড়িতে ঠিক এই সময়েই হা রে রে রে করে বিরাট ডাকাত দল চড়াও হল। ডাকাতরা দরজা ভেঙে ঢোকার আগেই গোপাল টাকাপয়সা ও গয়নাগাটি নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে বৌকে সাবধান করে বাগানে পালিয়ে গেল। চোর ব্যাটা কিন্তু আর পালাতে পারল না- সে টালির চালে বসেই ঠক-ঠকিয়ে কাপঁতে লাগল। বৌ সব বুঝতে পেরেছে যে চালের উপর একজন কেউ আছে, ওর উপস্থিতি ডাকাত দল আসার আগেই হয়েছে-গোপাল বৌকে সেজন্য সাবধান করে দিয়েছে কি করতে হবে। কাঠের দরজা ভেঙে ডাকাতরা ঘরে ডুকেই গোপালের স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করল, বাড়ির কর্ত্তা কোথায় আগে বল, নইলে তোকেই রাম ধোলাই দেব। মিথ্যে কথা বললেই খুন করব, তাড়াতাড়ি বল।
গোপালের স্ত্রী বেজায় বুদ্ধিমতি। সে ডাকাতদের বললে, বাড়ির কর্ত্তা তোমাদের ভয়ে টালির চালের উপর বসে রয়েছে। তার কাছেই সিন্দুকের চাবি আছে। এর বেশি কিছু আমি জানিনা গো, তোমাদের পাড়ে পড়ি গো। আমাকে মেরো না গো বাছারা সব!
ডাকাতরা চোরকে চাল থেকে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলে, সিন্দুকের চাবি কোথায় শীঘ্র বল, কোথায় আছে? নাহয় তোকে মেরে ফেলব। হারামজাদা কোথাকার। চোর ভ্যাবা চ্যাকা খেয়ে বললে, সত্যি বলছি, মাইরি বলছি-আমি কিছুই জানি না। আমি এ বাড়ির কেউ নই, আমি নতুন লোক।
ডাকাতেরা চোরের কথা মোটেই বিশ্বাস করলে না, তাকে বাড়ির কর্ত্তা ভেবে চাবি আদায় করার জন্য নির্দয়ভাবে পেটাতে লাগল। তবুও চাবি পেল না কোনমতেই। এতে খানিকক্ষণ দেরিও হয়ে গেল ডাকাত দলের। ইতিমধ্যে গোপাল বাইরে থেকে গ্রামের লোকজন নিয়ে হই হই করে আসতে থাকলে ডাকাতেরা ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল বটে, কিন্তু চোরটাকে প্রায় মেরেই রেখে গেল। গোপাল আর একটু দেরি করলেই বেচারা প্রাণে মারা যেত সেদিন। পাড়াপড়শী ডাকাত তাড়াতে এসে মৃতপ্রায় চোরটাকে বাগে পেয়ে যেই মারতে যাবে গোপালের স্ত্রী বাধা দিয়ে বললে, ওকে আর মেরো না গো, ওকে বাড়ির কর্তা বানিয়ে আমরা এ যাত্রায় বেঁচে গেলুম। আধমরা চোরটাকে উপর খাড়ার ঘা আর দিও না। ও আমাদের অনেক উপকার করেছে।
তারপর গোপালের স্ত্রী যখন সব কথা খুলে বললে পাড়ার লোকেদের, তখন পাড়ার লোকেরা গোপাল ও গোপালের স্ত্রীর বুদ্ধির খুব প্রশংসা করতে লাগল। চোরটা গরম দুধ খাইয়ে চাঙা করে তুলে বিদায় করে দেওয়া হল- বলাবাহুল্য যাতে কোনও দিন চুরি আর না করে তার জন্য সতর্ক করে দিয়ে এবং ব্যবসা পত্র করে সৎপথে চলার জন্য গোপাল কিছু টাকা ব্যবস্থা করে দিয়ে চোরকে ছেড়ে দিল।
পূর্ববর্তী:
« গোপালের চিঠি লেখা
« গোপালের চিঠি লেখা
পরবর্তী:
গোপালের পিতৃ-বিয়োগ »
গোপালের পিতৃ-বিয়োগ »
Leave a Reply