একদিন অফিস থেকে ফিরে স্ত্রী প্রফুল্ল কণ্ঠে জানাল, ‘অবশেষে আমাকে ছুটি দিয়েছে। ভাবছি, কুবানে গিয়ে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করে আসব। আশা করছি, তোমার আপত্তি নেই।’
হুমম! আমার স্ত্রীর কথায় আপত্তি করা খারাপ আবহাওয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার মতোই নিরর্থক।
‘তা যাও না, ঘুরে এসো,’ নিরাসক্ত স্বরে বললাম।
স্ত্রীর আসন্ন ভ্রমণের সম্ভাবনা আমাকে স্বস্তি দিচ্ছিল না একেবারেই। নিজে নিজে রান্না করা, ঘরদোর পরিষ্কার করা এবং অন্যান্য অপ্রীতিকর গৃহস্থালি কাজের কথা ভেসে উঠছিল মনে। একটা কিছু করা আবশ্যক, উদ্ভূত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
একদিন ডিনারের সময় খুব শান্ত গলায় তাকে প্রশ্ন করলাম, ‘তোমার ছুটির খবর কী? বাতিল করে দেয়নি তো?’
‘মনে তো হয় না। কিন্তু জিজ্ঞেস করছ কেন?’
‘এমনিই… ভাবছিলাম, তোমার বাবা-মা অপেক্ষা করছেন…’
পরদিন আবার জানতে চাইলাম, ‘যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করলে? মাস খানেক বিশ্রাম নিতে পারতে, শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারতে টাটকা হাওয়ায়…’
‘এক মাস কেন? গেলে আমি বড়জোর ১০ দিনের জন্য যাব,’ নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে জানাল আমার স্ত্রী।
‘না, তোমার উচিত হবে খুব ভালো করে বিশ্রাম নেওয়া,’ আমি পীড়াপীড়ি করতে শুরু করলাম।
‘আশ্চর্য ব্যাপার! আগে কখনো আমার জন্য এতটা দরদ তো তুমি দেখাওনি!’
‘নিজেকে শুধরে নিচ্ছি। যে ভুলগুলো আগে করেছি…’
‘না, অন্য একটা কিছুর গন্ধ পাচ্ছি আমি,’ সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে স্পষ্টতই সংশয় প্রকাশ করল স্ত্রী।
এরপর আবার যখন তার ভ্রমণ প্রসঙ্গ উত্থাপন করলাম, সে রীতিমতো নার্ভাস বোধ করতে লাগল।
‘বুঝতে পারছি না, আমাকে বাড়ি থেকে সরাতে তুমি এত তৎপর কেন? তুমি যে একটা ফন্দি আঁটছ, সেটা অনুভব করতে পারছি।’
অস্বস্তিতে পড়ার অভিব্যক্তি চোখে-মুখে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে বললাম, ‘কোনো ফন্দিই আমি আঁটছি না। কিন্তু তুমি লক্ষ করে দেখো, তোমার নার্ভাস সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়েছে, অকারণে গলার স্বর চড়াচ্ছ। এর মানে তোমার বিশ্রাম প্রয়োজন। এবং যথাসম্ভব অবিলম্বে।’
‘মনে হচ্ছে, আমি রহস্য ভেদ করতে পেরেছি। তুমি স্বাধীনতা চাইছ। মনের সুখে যা খুশি তা-ই করে বেড়ানোর শখ জেগেছে? সে সুযোগ তোমাকে দেওয়া হবে না!’
‘কী যে উল্টাপাল্টা বকছ! তোমার প্রতি আমার কতটা টান, তা তো তুমি জানো।’
‘বউ সামনে থাকলে সব পুরুষই সুবোধ! আমার ঢের জানা আছে। তোমার চোখ দেখে বুঝতে পারছি, তুমি চালাকি করছ। জেনে রাখো, আমি কোত্থাও যাচ্ছি না!’
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলার ভান করলাম। তারপর মুখ লুকোলাম পত্রিকায়, যাতে বিজয়ের হাসি-মাখা আমার অভিব্যক্তি স্ত্রীর নজরে না আসে।
পূর্ববর্তী:
« পরিচয়পর্ব – তাতিয়ানা নোভিকভা
« পরিচয়পর্ব – তাতিয়ানা নোভিকভা
পরবর্তী:
পরিবর্তন »
পরিবর্তন »
Leave a Reply