প্রখর দাবদাহের দুপুর।…এ ক্ষেত্রে আবহাওয়া অবশ্য অপ্রাসঙ্গিক। শহরের কেন্দ্রে এক রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম আমরা। আমি ও আমার স্বামী। দুঃখিত, আমার স্বামী ও আমি।
‘আপেল খাবে নাকি?’ জিজ্ঞেস করলাম।
‘না,’ কর্কশ স্বরে বলল সে।
একটা আপেল নিয়ে মনের আনন্দে খেতে শুরু করলাম আমি নিজেই। সে সরোষে তাকাল আমার দিকে।
‘রাস্তায় আপেল খাওয়া অশোভন, অসংস্কৃত…’
আপেলের টুকরো আটকে গেল আমার গলায়। আমি কাশতে শুরু করলাম।
‘কাশাও অশোভন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক।’
তার মন্তব্য স্পষ্টতই ন্যায়সংগত। লজ্জায় মুখ লালাভ হয়ে উঠল আমার। আমি হাত দিয়ে আধা খাওয়া আপেলটি ঢেকে ফেললাম।
‘হাতে করে আপেল বয়ে নিয়ে যায় নাকি কেউ! পকেটে ঢোকাও। কারও সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে লজ্জার সীমা থাকবে না।’ ভর্ৎসনার সুরে বলল সে।
দুর্ভাগা আপেলটাকে পকেটে চালান করতে না-করতেই দেখি, সত্যিই আমাদের এক পরিচিতজন এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। আমি তাকে সম্ভাষণ জানালাম হাসিমুখে, ‘হাই! কেমন
আছো?’
আমার স্বামী কঠোর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে শিক্ষকের ভঙ্গিতে বলল, ‘দেখা যাচ্ছে, তুমি ঠিকমতো সম্ভাষণ জানাতে শেখোনি। “শুভদিন” বলা কি এতই কঠিন?’
‘না, কঠিন নয়।’ আমি সম্মতি জানালাম।
এক বেবিসিটার এক শিশুর হাত ধরে যাচ্ছিল আমাদের পাশ দিয়ে। শিশুটি হঠাৎ আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসি-জাগানো এমন এক মুখভঙ্গি করল, আমি হেসেই ফেললাম সশব্দে।
‘আবার!’ সকাতরে অনুনয় করে বলল আমার স্বামী। ‘শহরের মাঝখানে গলা ফাটিয়ে হাসা! লোকে কী বলবে? তোমাকে ভদ্রতা শেখানোর শক্তি আর নেই আমার।’
শোভন আচরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক হাতে ধরে রাখা অতিকায় ঝুড়িটা অন্য হাতে বদল করতে আমি থামলাম একটু সময়ের জন্য।
‘প্লিজ, আমার ডান পাশে আসবে?’ অনুরোধ করে বললাম তাকে। ‘নয়তো হঠাৎ তোমার গায়ে ঝুড়ি লাগিয়ে ফেলি যদি? তোমার পোশাকও তো নোংরা হবে।’
‘পুরুষ ডান পাশ দিয়ে হাঁটে, তুমি সেটা কোথায় দেখেছ?’ সক্ষোভে বলল সে, ‘তোমাকে কিছু শেখানো আর না-শেখানো একই কথা।’
অনুগতের মতো আমি ঝুড়িটা আবার নিলাম অবশ হয়ে আসা ডান হাতে। তারপর আমরা এগোতে থাকলাম সদাচরণের সব রীতিনীতি অনুসরণ করে।
পূর্ববর্তী:
« শিশুর মতো ঘুম
« শিশুর মতো ঘুম
পরবর্তী:
শীতকালে মাছি »
শীতকালে মাছি »
Leave a Reply