ডিভানের এক প্রান্তে বসে টেলিফোন সেটটা নিজের কাছে টেনে নিলেন রেবরোভ। তারপর ছন্দময় গতিতে নম্বর ঘোরাতে শুরু করলেন। প্রতিটি ডিজিট ডায়াল করার আগে তাকিয়ে নিচ্ছিলেন নিজের কোলের ওপরে সযত্নে রাখা পেপার কাটিংয়ের দিকে।
‘হ্যালো, ট্র্যাভেল এজেন্সি থেকে বলছি,’ একবার রিং হতেই উত্তর এল।
‘সাইপ্রাসে প্যাকেজ ট্যুরের ব্যাপারে কথা বলতে চাইছিলাম,’ একটু কাঁপা-কাঁপা গলায় ইতস্তত করে প্রশ্ন করলেন রেবরোভ।
‘কয় দিনের প্যাকেজ ট্যুর প্রয়োজন আপনার?’ ওপাশের অমায়িক কণ্ঠের মেয়েটি নিশ্চিতভাবেই অপরূপা।
‘এক সপ্তাহের,’ কথাটি অতি অনায়াসে উচ্চারণ করতে পেরে রেবরোভ আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেন।
‘আজ বুকিং দিলে আসছে বুধবারেই আপনি চার্টার্ড ফ্লাইটে মিনস্ক থেকে রওনা দিতে পারবেন।’
‘খরচ কত পড়বে, বলবেন কি?’
‘প্লেন ভাড়া, হোটেল ও খাওয়া—সব মিলিয়ে জনপ্রতি খরচ পড়বে ৭৪৫ ডলার। আজই বুকিং দেবেন?’
‘না, আজ নয়। বিশদ তথ্যের জন্য ধন্যবাদ। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’ লাইন কেটে দিয়ে এইমাত্র শোনা সংখ্যাটি মনে মনে দুই দিয়ে গুণ করতে করতে রেবরোভ হেলান দিয়ে বসলেন। তারপর রিসিভারটা রাখলেন টেলিফোনে। চোখ বন্ধ করলেন তিনি। কল্পনায় দেখতে পেলেন সমুদ্রতীরের সব সৌন্দর্য: তীরে ঝাঁপিয়ে পড়া তরঙ্গমালা, ঝুরঝুরে হলদেটে বালু, গা ঝলসানো রোদ, দূর-দিগন্তে সাদা ধবধবে ত্রিভুজ পালওয়ালা নৌকা, চারপাশে পামগাছ, প্রলুব্ধকারী ভঙ্গিতে কোমর দুলিয়ে হেঁটে চলা তাম্রবর্ণ তরুণীরা, প্রফুল্ল সংগীত…।
হাঁড়ি পড়ে যাওয়ার বিকট শব্দ রেবরোভকে ফিরিয়ে নিয়ে এল কঠোর বাস্তবতায়। অলস ভঙ্গিতে আড়মোড়া ভাঙলেন তিনি। হাই তুললেন। তারপর উঠে রান্নাঘরের দিকে গেলেন। স্ত্রী সেখানে সাদাসিধে ডিনারের আয়োজন করছে।
‘শুনছ, পরের সপ্তাহে সাইপ্রাস না গিয়ে আমরা যদি আমাদের সামার হাউসে যাই, তাহলে কত টাকা সাশ্রয় হবে আমাদের, তুমি জানো?’ রান্নাঘরের ছোট্ট টুলে বসতে বসতে রেবরোভ প্রশ্ন করলেন ধাঁধার সুরে।
‘কত?’ স্বামীর প্রশ্নটি তার জন্য এতটাই অপ্রত্যাশিত যে, সসেজ কাটতে উদ্যত তার হাত হাওয়ায় ভেসে রইল খানিকক্ষণ।
‘প্রায় দেড় হাজার ডলার,’ সগর্বে জানালেন রেবরোভ।
‘অত টাকা আমি বাপের জন্মে দেখিনি। অবশ্য তুমিও দ্যাখনি,’ হাসতে হাসতে স্ত্রী বলল।
‘তবু ভাবতে ভালো লাগছে,’ অতীব সুমিষ্ট শোনাল রেবরোভের কণ্ঠ।
কিন্তু স্ত্রীর দৃষ্টি ঘটনার বিশ্লেষণ দাবি করল।
‘ভাবতে সত্যিই ভালো লাগছে,’ রেবরোভ আবারও বললেন। ‘এই ভেবে পরম তৃপ্তি পাচ্ছি যে, দেড় হাজার ডলার ব্যয় করবার সামর্থ্য আমাদের না থাকলেও সেই পরিমাণ অর্থ আমরা সাশ্রয় করতে পারি।’
Leave a Reply