রাজা: বুঝলে গবেষক, ভেবে দেখলাম, এ জাতি বড়ই অদ্ভুত,
গবেষক: জি, যা শুনে সবই বিশ্বাস করে, প্রতিশ্রুতি থেকে প্রেত-ভূত!
রাজা: কত কিছুই তো দেখলাম, আরও কত কী যে বাকি, হায় রে বাঙালি!
গবেষক: শেষে ঠিকই মেনে নেয় সবই, সারা দিন খামোখা মুখে থাকে গালি!
রাজা: পাঁচ বছরে দেশের জন্য ওদের খালি একবার কাজে লাগে হাত!
গবেষক: বাকি পাঁচ বছর তো হাত গুটিয়ে বসে থাকে, শুধু ভাবে দুধ-ভাত!!
রাজা: দুধ তো খাবে বিড়াল ছানা, কালো কিংবা ধলো,
গবেষক: ঠিক! ঠিক!! রেল নিয়ে সে রকমই তো হলো!
রাজা: এ দেশে দখল হয় সবই, খাল-বিল-জমি-জমা এমনকি ফুটপাতও!
গবেষক: কী করে যে বলি, মানুষের কান্না শুনবে, যদি একটু কান পাত!
রাজা: ফুটপাত মুক্ত করতে মন্ত্রী তো কবেই হুকুম দিয়েছেন, কী দেননি?
গবেষক: এটা কি আলাদিনের দৈত্য নাকি, বললেই ক্লিয়ার হবে অমনি!
রাজা: তবে কী চাও গবেষক, খুলব নাকি আরেকটা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়!
গবেষক: না মহারাজ থাক, যা আছে ওতেই জনগণ বহুত যন্ত্রণা লয়!
রাজা: শুনলাম অফিস করে চাঁদাবাজি হচ্ছে রাস্তাঘাট আর ফুটপাতে?
গবেষক: মানুষজনের ঘুম হারাম, আপনার দলীয় লোকদের উৎপাতে!
রাজা: বোঝোনি গবেষক এটা আসলে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র!
গবেষক: তাই যদি হয় গুঁড়িয়ে দিন, কে দেয় এসব কানপড়া আর মন্ত্র?
রাজা: কে আবার? এ দেশের হতচ্ছাড়া মিডিয়া, ওরাই তো এখন দুর্নীতির খবরের একেকটা পিডিয়া!
গবেষক: কী লাভ আর রাজামশায়, অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে!
ওরাও আর কত সহ্য করবে, গোটা জাতিই তো উঠছে হাঁপিয়ে!!
রাজা: সেই কবে একাত্তরে স্বাধীন হলাম, স্লোগান ছিল মুক্তি চাই!
গবেষক: পিঠ তো এখন দেয়ালে, যদি দেয়ালটাই এবার সরানো যায়!!
রাজা: ঠিক ঠিক, এ ছাড়া তো আর উপায়ও নাই!
গবেষক: উন্নয়নের স্বপ্ন ছিল পদ্মা নদীর দুই পারে,
হওয়ার আগেই ভাঙল সেতু, দুর্নীতির বিষম ভারে!
রাজা: এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন কোন এক ব্যাংকের সাবেক এমডি!
কোথায় সেতু কোথায় হেতু! সবই আজব, সবই আজ কোলাবেরি ডি!
গবেষক: নামধাম জানলে বলে দিন, বুঝি না তো করলে এত হেঁয়ালি!
মানুষ আজ দেখতে চায়, কত বড় কাবিল সে, কত বড় খেয়ালি!
রাজা: ভেব না, ওরা তো সব আমজনতা, জুসপ্যাকে খায় ম্যাঙ্গো ফ্লেভার!
আরে মিয়া রাজনীতির তো এটাই মজা, ওরা চালাক আমরা ক্লেভার!
গবেষক: কিন্তু সেতু-চুরি নিয়ে দেশতো পড়েছে ভাবমূর্তির সংকটে, তবে সংকটটাও যদি চুরি করাতে পারতেন, সবই ক্লিয়ার হতো বটে!!
রাজা: গবেষক আইডিয়া তো দিয়েছো একখান খাসা!
গবেষক: দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে এটা ছিল বাকি, হায়রে তামাশা!
রাজা যায় রাজা আসে, রাজায় রাজায় মাসতুতো ভাই, মনে মনে অনেক মিল, মিল নাই শুধু চেহারায়!
রাজা: আর তাতেই তো বোকার দল, পাঁচ বছর পর পর ধরা খায়!
গবেষক: তা রাজা মশায়, জনগণের জন্য কী আনলেন নতুন করে প্যাকেটে!
রাজা: বিশাল বড় স্বপ্নের বাজেট (স্বপ্নগুলো লেখা আছে সাদা কালিতে, ব্রাকেটে!!)!
গবেষক: আজকাল দেখি রাজামশায়, কথায় কথায় টানেন যতিও!
রাজা: আপনি বাঁচলে বাপের নাম, চেপে যাও ওইটুকু ক্ষতিও!
গবেষক: বাজেট তো বেশ বড় হলো, এত টাকা পাবেন কই?
রাজা: চেক পাঠিয়েছি, দেখা হলেই গৌরী সেনের নিয়ে নিব টিপসই!
গবেষক: তা না হয় নিলেন, কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে ঘটছে কী এসব ঘটনা!
রাজা: ওগুলোর সব সত্যি না, কিছু কিছু সত্যি হলেও, বাদ বাকি সব রটনা!
গবেষক: এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দিল কারা?
রাজা: কারা এরা?
গবেষক: আগুনের লেলিহান শিখায় বিজয় মিছিলে উদ্যত ছিল যারা!
সবাই চিনে, তবু ওদের ধরতে আজও কত প্রশাসনের টালবাহানা,
অথচ হরতালে একটা বাস পোড়াতেই কতজন দেখে এল জেলখানা!!
রাজা: মুখ সামলে কথা বলো গবেষক, বেশি বাড়িও না আর,
মরিবার তরেই পাখা গজায় পিপীলিকার, সঙ্গে চামচিকার!
গবেষক: তা না হয় বন্ধ করলাম, মুখে টানলাম এই জিপার,
কিন্তু বুয়েটে হচ্ছেটা কী, বুঝতেছি না কে ব্যাটসম্যান আর কে যে কিপার!
রাজা: তুমি গবেষক, বুয়েট নিয়ে ভাবনাটা অবশ্য তোমাকে মানায়,
বিষয়টা তো আমারও ক্লিয়ার না, তোমাকে আর কী-ই-বা জানাই!
গবেষক: তবে শুনেছি ওই তাঁর বাড়ি আর আপনার বাড়ি নাকি একই জেলায়,
তাই মানুষে একটু এদিক-ওদিক কয়, বাকিটা অবশ্যই ফুঁ দিয়ে ফোলায়!
রাজা: চেপে যাও গবেষক, ঘটনা বড়ই সেনসেটিভ!
তবে দেশের জন্য সবাইকে বলি ‘প্লিজ বি পজিটিভ!’
গবেষক: যশোরের সেই ওসির কাহিনি কি শুনেছেন রাজামশায়?
রাজা: পুলিশ নিয়ে আর পারি না, আবার কী করেছে, বলো তাই!
গবেষক: না তেমন কিছু না, পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে,
টিপে ধরেছে এক সাংবাদিকের গলা!
রাজা: ধুর মিয়া, তাই বলে পুলিশ নিয়ে সাজে নাকি
তোমার-আমার কথা বলা?
গবেষক: ওকে বাদ দিলাম, কিন্তু আগুন যে লেগেছে এবার রাবি ক্যাম্পাসে!
রাজা: এরা কি সবাই ড্রাগন নাকি, এত আগুন কেন এদের নিঃশ্বাসে?
গবেষক: এরা চোখ তুললেই আগুন জ্বলে আর আঙ্গুল তুললেই পড়ে লাশ,
দেশের ফিউচার যে কী, নেতাদের ওপর জনগণের হারিয়ে যাচ্ছে বিশ্বাস!
রাজা: এই বাদলা দিনে রাবি উত্তপ্ত, কী কারণ, কী সেই হেতু!
গবেষক: রাজামশায়, কারণ তো এখন একটাই, ঘুরেফিরে পদ্মা সেতু!
রাজা: তিলকে ওরা তাল করেছে, স্মলকে করেছে বিগ!
গবেষক: কুকুরের সেই লেজের থিওরিতে আবার পড়েছে ছাত্রলীগ!
রাজা: সমালোচনা বহুত হয়েছে গবেষক,
আচ্ছা তোমার কি কোনো ক্লান্তি নাই?
গবেষক: ক্লান্তি মোরে ক্ষমা করেছে,
কিন্তু মানুষের মনে যে কোনো শান্তি নাই!
নির্বাচনের কত প্রমিজ আজও আছে জমা,
মানুষ কিন্তু সব মনে রাখে, দাঁড়ি কিংবা কমা!
রাজা: কথার কী আর শেষ আছে, কথা তো সবই কথার কথা!
গবেষক: কর্মটা হোক ঠিকঠাক, কথাটাই হোক যথার্থতা!
দেশটা যদি ঠিক করে দেন, আইনের প্রয়োগ করেন কঠিন!
আইন মানলে স্যালুট পাবে, অন্যায়ের জন্য কঠিন গিলোটিন!
রাজা: এত দিনের পুরোনো অভ্যাস এক দিনে কী আর বদলায়?
গবেষক: কী করে হবে অন্যায় করেও যদি এভাবে পেতে থাকে লাই!
রাজা: বহুত হয়েছে গবেষক, আমি এখন যাই,
মাথায় তোমার বুদ্ধি আছে, কাজে লাগাও গবেষণায়!
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ৩০, ২০১২
Leave a Reply