কয়েক দিন আগে সম্পাদক আমাকে ডেকে বললেন, ‘বহুদিন হলো পাঠকদের নতুন কিছু দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়নি। একটা রসগল্প রচনা করুন না! তবে সেটা হতে হবে অনন্য ও অভিনব। অন্যদের লেখা রসগল্পগুলোর মতো যেন না হয়।’
ঠিক তখন কেন যে কথাটা আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, ‘অনন্য ও অভিনব? তাহলে সেটা রসগল্প হবে না, হবে অ্যান্টি-রসগল্প।’
সম্পাদক আমার দিকে তাকালেন মুগ্ধ দৃষ্টিতে, বললেন, ‘বাহ্! অ্যান্টি-রসগল্পই লিখুন।’
ঘরে ফিরে ভাবতে বসলাম: অ্যান্টি-রসগল্প—সেটা আবার কী বস্তু?
এক বন্ধু আছে আমার। সে একাধারে পদার্থবিদ, রসায়নবিদ ও কবি। তার কাছে গিয়ে হাজির হলাম এই প্রশ্ন নিয়ে।
‘অ্যান্টি’, এক মুহূর্ত না ভেবে উত্তর দিল সে, ‘অর্থাৎ বিপরীত। আদি যুগে রসগল্প বলতে বোঝাত ছোট্ট, হাস্যোদ্রেককারী রচনা, যেটার সমাপ্তি অভাবিত। আর তাই অ্যান্টি-রসগল্প মানে খুব সম্ভব, দীর্ঘ, বিরক্তিকর রচনা, যেটার শুরুতেই সমাপ্তি অনুমান করে নেওয়া সম্ভব।’
‘বললেই হলো!’ জানালাম তাকে। ‘তুমি যা বললে, সেটা তো অ্যান্টি-রসগল্প নয়ই, বরং অতি প্রচলিত আধুনিক রসগল্পের ধরন। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, সম্পাদক আমার কাছে অন্যকিছু চাইছেন। কিন্তু কী সেটা!’
হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে একটা আইডিয়া এল মাথায়। হ্যাঁ, আমি এবার এমন একটা কিছু লিখব, বিশ্বের রসগল্পজগতে নতুন ধারার প্রচলন করবে। মিশেল দেব পুরোনোর সঙ্গে নতুনের।
সুন্দর দেখে একটা কাগজ নিয়ে ওপরে বড় বড় অক্ষরে লিখলাম গল্পের নাম ‘অ্যান্টি-রসগল্প’ এবং একেবারে নিচে ‘সমাপ্তি’। আর একটি বাক্যও নয়, একটি শব্দও নয়।
ছোট্ট? এর চেয়ে ছোট হতে পারে না।
হাস্যোদ্রেককারী? অবশ্যই। হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে যাবে।
অভাবিত সমাপ্তি? নিশ্চয়ই! ও’হেনরির গল্পের চেয়েও অভাবিত ও আকস্মিক।
লেখাটা খামে ভরে পাঠিয়ে দিলাম সম্পাদকের ঠিকানায়। এর পর থেকে প্রতিদিন নজর রাখতে শুরু করলাম পত্রিকায় আমার লেখাটা ছাপল কি?
পার হয়ে গেল এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ। লেখার দেখা পেলাম না।
এক কাপ কড়া কফি গিলে সাহস সঞ্চয় করে রওনা দিলাম সম্পাদকের উদ্দেশে। গিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলাম আমার অ্যান্টি-রসগল্প তিনি পেয়েছেন কি না।
সম্পাদক তৃপ্তির সঙ্গে নড়েচড়ে বসলেন। তারপর বললেন, ‘অ্যান্টি-রসগল্প? হ্যাঁ, পেয়েছি তো। পড়েছি এবং জানেন, আপনার জন্য মঞ্জুর করেছি অ্যান্টি-সম্মানী।’
সংকলন ও অনুবাদ: মাসুদ মাহমুদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৯, ২০১২
Leave a Reply