মেয়েটা এক হাসপাতালে নার্সের কাজ করত। তরুণী, অপরূপা। ছেলেটিও যেনতেন নয়, দীর্ঘদেহী, চওড়া কাঁধ। ঢালাইকার। কাজ করত এক গৃহনির্মাণ কোম্পানিতে।
তাদের দেখা হতো না কখনোই। কিন্তু একদিন এক ঘটনা ঘটল। নির্মীয়মাণ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গেল ছেলেটি।
তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো। মেয়েটি তাকে ইনজেকশন দিল, সার্জনকে সহায়তা করল অপারেশনের সময়।
যতটা সময় ছেলেটা জীবন্মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল, মেয়েটি এক মুহূর্ত সরল না তার কাছ থেকে। তার সেবা করল, অপলক তাকিয়ে রইল তার দিকে এবং প্রেমে পড়তে থাকল।
জ্ঞান ফিরে এলে ছেলেটিও তাকিয়ে থাকত মেয়েটির দিকে, হাসত, ডাকত ‘মা’ বলে, তারপর আবার অজ্ঞান হয়ে পড়ত।
মেয়েটি ছেলেটির বাহুতে হাত বোলাত, আঁচড়ে দিত তার কোঁকড়ানো চুল, বেডপ্যান পরিষ্কার করত আর স্বপ্ন দেখত—ছেলেটি সুস্থ হয়ে উঠলে তারা বিয়ে করবে।
যেদিন তারা বিবাহ রেজিস্ট্রি অফিসে গেল, চারপাশে সবাই চিৎকার করছিল ‘গোরকা’* বলে। সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ ছিল নির্মাণশ্রমিকদের প্রধান, যার গাফিলতির কারণে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল ছেলেটিকে।
ছেলেটা হঠাৎ অন্ধকার দেখল চোখে—কী অবিশ্বাস্য আবেগ নিয়ে মেয়েটি কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ার অনুশীলন শুরু করল তার সঙ্গে, করল হার্ট ম্যাসাজ!
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি এবং সারা জীবন বাসব’, বলল মেয়েটি।
এবং কেঁদে ফেলল।
এ সবকিছুই সে করল বিয়ের দু’বছর পর স্বামীকে বলতে, ‘কেন যে তখন মরোনি! আমার সারা জীবনটা তছনছ করে দিলে!’
* নবদম্পতিকে চুমু খেতে আহ্বান জানাতে এই শব্দটি উচ্চারণ করে থাকে অভ্যাগতরা।
সংকলন ও অনুবাদ: মাসুদ মাহমুদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৯, ২০১২
Leave a Reply