এক চমৎকার সকালে লিখে ফেললাম এক রসগল্প। বত্রিশ পৃষ্ঠার। তারপর সেটাকে বগলদাবা করে চললাম আইভাইভাই শহরের উদ্দেশে। ‘কোরানো হর্সর্যাডিশ*’ নামের বিদ্রূপাত্মক পত্রিকা বের হয় সেখান থেকে।
‘গল্পের আইডিয়াটা সুন্দর,’ পত্রিকা অফিসে আমাকে বলা হলো, ‘তবে বেজায় লম্বা। মূল ভাবটা রেখে অপ্রয়োজনীয় অংশ ছেঁটে ফেলতে হবে। বড্ড বেশি ট্যালটেলে। পানি ঝরিয়ে ফেলুন।’
বাড়ি ফিরে অনেকটা সময় ধরে বসে রইলাম গল্পটা নিয়ে। কেটে বাদ দিলাম কয়েকটি শব্দ। অতিরিক্ত আর কিছু খুঁজে পেলাম না বহু চেষ্টা করেও।
পরের সপ্তাহে আবার হাজির হলাম ‘কোরানো হর্সর্যাডিশ’ পত্রিকার সম্পাদকের সামনে।
‘আপনার পরামর্শ পালন করেছি,’ ঠিক যেন রিপোর্ট করলাম তাঁর কাছে, ‘অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে ফেলেছি গল্প থেকে।’
গল্পটা দেখে নিয়ে সম্পাদক জানালেন, ‘উহুঁ! পানির ট্যাপটা পুরো খুলে দিতে হবে। এক ফোঁটা পানিও যাতে না থাকে।’
টানা তিন দিন চালালাম গল্প-সংক্ষিপ্তকরণ প্রক্রিয়া। বহু কষ্টে কয়েকটি বাক্য কেটে বাদ দিতে সক্ষম হলাম বটে, তবে শেষমেশ রেগে গিয়ে ইস্তফা দিলাম এই অসম্ভব কর্মে।
মাস তিনেক পরের কথা। একটা ফোন এল আমার কাছে।
‘হ্যালো, কোরানো হর্সর্যাডিশ পত্রিকা থেকে বলছি। গল্পটা মেরামত করেছেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘খুবই ভালো কথা। আমাদের প্রকাশিতব্য পরবর্তী সংখ্যায় কিছুটা জায়গা ফাঁকা আছে। খুব দ্রুত লেখাটা দিতে হবে কম্পোজ করার জন্য। প্রেস অপেক্ষা করছে।’
‘আমার সব রেডি। এক্ষুনি পোস্ট অফিসে গিয়ে পার্সেল করে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
‘পার্সেল? যদি হারিয়ে যায়? আপনি নিজেই নিয়ে আসুন না!’
‘আমাদের এখানে পথঘাটের একেবারেই যা তা অবস্থা এখন। প্রবল বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ…’
‘হুমম… তাহলে টেলিগ্রাফ করে পাঠিয়ে দিন।’
গেলাম পোস্ট অফিসে।
‘কী!’ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাল টেলিগ্রাফ অপারেটর। ‘পুরো এই লেখাটা টেলিগ্রাফে পাঠাতে চান? তাও আবার আর্জেন্ট?’
‘হ্যাঁ।’
‘পাঠানো তো অবশ্যই সম্ভব, তবে খরচ কত পড়বে, সেটা ভেবে দেখেছেন?’
সময়মতো সংবিৎ ফিরে পেলাম আমি। গল্পটা ফিরিয়ে নিয়ে সেটাকে কাটছাঁট করতে শুরু করলাম।
‘এই বাক্যের কোনো প্রয়োজনই নেই,’ বিড়বিড় করে বলছিলাম তখন, ‘এটা একেবারেই অর্থহীন বাক্য…এই প্যারাটা অতিরিক্ত…এই পৃষ্ঠাটাও…’
বত্রিশ পৃষ্ঠার গল্প থেকে অবশিষ্ট রইল মাত্র কয়েকটি বাক্য।
পরদিন সম্পাদক ফোন করলেন আবার।
‘সাব্বাশ!’ প্রশংসা ঝরে পড়ল তাঁর গলায়। ‘দারুণ একখানা রসগল্প হয়েছে।’
* অত্যন্ত ঝাঁঝালো স্বাদের মুলাজাতীয় সবজিবিশেষ।রু শ মি শা লি
সঠিক ব্যালান্সের উদাহরণ: ১০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে পাবে গিয়ে পেট ভরে বিয়ার খেয়ে আবার সাইকেল চালিয়ে ফিরে আসা।
একটি বিজ্ঞাপনী আইডিয়া:
তিন শিশুর সংলাপ।
—আমার মা আমাকে কপির বাগানে খুঁজে পেয়েছে।
—আর আমাকে মা-বাবার কাছে পৌঁছে দিয়েছে সারস পাখি।
—আর আমাকে বাবা-মা কিনেছে দোকানে।
নেপথ্যে কণ্ঠ: রুশ কনডম—জন্মনিয়ন্ত্রণের শতভাগ নিশ্চয়তা।
বন্ধুলাভের উপায় নামের বই প্রকাশের পর ডেল কার্নেগিকে আরেকটি বই লিখতে হয়েছিল আহরিত বন্ধুদের থেকে মুক্তিলাভ নামে।
সংকলন ও অনুবাদ: মাসুদ মাহমুদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০২, ২০১২
Leave a Reply