ক্লিম সেমিওনভিচ একটা স্বপ্ন দেখলেন। বিদঘুটে ও বিচিত্র সেই স্বপ্ন; যেন তিনি ক্লিম সেমিওনভিচ নন, নন পাভেল কন্দ্রাতিয়েভিচ, দমিত্রি খ্রিস্তফরোভিচ বা সোফিয়া মার্কভনা। একেবারেই ভিন্ন কেউ। তবে ক্লিম সেমিওনভিচ নন নিশ্চিতভাবেই।
স্বপ্নে দেখছেন, তাঁর কাছে এল স্ত্রী। স্ত্রী তাঁর, তবে স্বপ্নে তাঁর নয়। যদিও সে এই সময় তাঁর পাশে শুয়ে ঘুমোচ্ছে, তবু সে যেন পরস্ত্রী, তাঁর আপন কেউ নয়।
এবং স্ত্রী (তাঁর নয়) স্বপ্নে তাঁর কাছে পর্দা কেনার টাকা চাইছে। কিন্তু তিনি তাকে টাকা দেবেন কেন! নিজের আপন স্ত্রীকেই তো তিনি দেন না, আর এ তো পরস্ত্রী।
‘দেব না!’ স্পষ্টভাবেই বললেন ক্লিম সেমিওনভিচ।
স্ত্রী চোখের জল ঝরাতে শুরু করল যথারীতি।
সেই সময় একটা আইডিয়া এল তাঁর মাথায়: তাকে টাকা দেবেন একটা শর্তে, ঘুম ভাঙার পরে সে আর টাকা চাইতে পারবে না।
পকেটে হাত ঢোকালেন তিনি এবং ঠিক সেই সময়ে সেখানে উদয় হলেন ক্লিম সেমিওনভিচ। সত্যিকারের ক্লিম সেমিওনভিচ, এই উদ্ভট স্বপ্নটি যিনি দেখছেন।
ক্লিম সেমিওনভিচ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন, বললেন, ‘এই যে তোমার স্বামী এসেছে। তার কাছে টাকা চাও।’
কিন্তু ওই ক্লিম সেমিওনভিচ সরাসরি অস্বীকৃতি জানালেন, ‘দেব না। নতুন পর্দার দরকার নেই আমাদের। পুরোনোটা আছে তো। প্রায় নতুনের মতোই।’
ক্লিম সেমিওনভিচ মনে মনে তাঁর সঙ্গে সহমত জ্ঞাপন করলেন। পর্দা কেনার সময় হয়নি এখনো। কিন্তু ওই ক্লিম সেমিওনভিচ এখন টাকা না দিলে পরে পকেট খসবে তাঁরই।
তাই তিনি বললেন, ‘পর্দা বদলানোর দরকার ছিল বহু আগেই!’
কথাটা বললেন বটে, যদিও সেটা তাঁর মনের কথা নয়।
ওই ক্লিম সেমিওনভিচ তখন জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিন্তু তুমি কে, সেটা তো বুঝলাম না!’
‘তাই তো!’ ভাবতে শুরু করলেন ক্লিম সেমিওনভিচ। ‘তাদের পর্দা-কাহিনিতে নাক গলানোর আমি কে?’
ভাবতে ভাবতে ঘুম ভাঙল তাঁর। তিনি উপলব্ধি করলেন, তিনিই ক্লিম সেমিওনভিচ। সত্যিকারের। অন্য কোনো ক্লিম সেমিওনভিচ নেই সেখানে।
চুমু খেলেন তিনি তাঁর ঘুমন্ত স্ত্রীকে। সে চোখ খুলে দেখল হাসিমুখ ক্লিম সেমিওনভিচকে, তারপর বলল, ‘কী, পর্দার জন্য টাকা দেবে?’
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০২, ২০১২
Leave a Reply