ছোট্ট, মজাদার একটা গল্প রচনা করেছিলাম। কৌতুক বলা চলে।
আসবাবপত্র নির্মাতা ফ্যাক্টরির এক ডিরেক্টর, ধরা যাক, তার নাম কুপৎসোভ, তার ফ্যাক্টরির আসবাবপত্রের মানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়ার মওকা ছাড়ে না কখনো। তো, একদিন বেশ দেরিতে বাসায় ফিরে সে দেখল, তার স্ত্রী, ধরা যাক, তার নাম সোফিয়া, তার পোশাকের আলমারিতে পিঠ ঠেকিয়ে যিশুর মতো দুহাত দুপাশে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
‘তুমি অমন অস্বাভাবিক পোজে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’ প্রশ্ন করল তার স্বামী।
‘কারণ, এই আলমারির দরজা আপনা থেকেই খুলে যাচ্ছে,’ স্ত্রী উত্তর দিল।
‘অসম্ভব!’ স্বামী বলল। ‘আলমারিটা তৈরি আমাদের ফ্যাক্টরিতে। আর আমাদের তৈরি জিনিস সব সময়ই উত্তম মানসম্পন্ন। মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান নিজে তদারক করে এই কাজ।’
কথা শেষ করেই সে স্ত্রীকে সরিয়ে দিল আলমারির সামনে থেকে। আলমারির দুয়ার খুলে গেল হাট হয়ে। স্বামী দেখল, আলমারিতে লুকিয়ে আছে তার ফ্যাক্টরির মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান।
কৌতুকটা আমাদের বাসার সবার পছন্দ হলো ভীষণ। সেটা আমি নিয়ে গেলাম পত্রিকা অফিসে।
‘কী এনেছেন আপনি এটা?’ কঠোর স্বরে জিজ্ঞেস করলেন সম্পাদক। ‘একেবারেই সিরিয়াস কৌতুক নয়। ভেবেছেন, গরু-গাধারা কাজ করে পত্রিকা অফিসে?’
নিশ্চিতভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে নিজের সাহিত্যকর্মটি ডাস্টবিনে ফেলে দিতাম আরেকটু হলেই। কিন্তু আমি এমন ধাতুতে গড়া—ভাঙব, কিন্তু মচকাব না।
কৌতুকটায় সামান্য পরিবর্তন এনে কয়েক দিন বাদে আবার গেলাম সম্পাদকের দপ্তরে।
‘আচ্ছা, বলুন তো,’ স্পষ্ট অভিযোগের সুরে সম্পাদক বললেন, ‘এই অসাধারণ লেখাটা লুকিয়ে রেখেছিলেন কেন? কী যে মজাদার কৌতুক! স্রেফ ভেবে দেখুন, মিস্টার গর্ডন অফিস শেষে বাসায় ফিরে দেখে, স্ত্রী মেরি আলমারির সামনে দুহাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ আলমারিটার দরজা বন্ধ হয় না এবং সেটার নির্মাতা স্বামীর ফ্যাক্টরি। আর আলমারির ভেতরে…হা হা হা। খুবই অর্থবহ কৌতুক। ত্রুটিপূর্ণ পণ্য নির্মাতাদের সূক্ষ্ম সমালোচনা। খুবই বুদ্ধিদীপ্ত!’
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৫, ২০১২
Leave a Reply