‘ডাক্তার সাহেব, আমার কী হয়েছে, বলুন তো?’
‘আপনার কী মনে হয়?’
‘আমার কিছুই মনে হয় না।’
‘তাহলে এসেছেন কেন?’
‘ব্যথা করে।’
‘কী?’
‘এখানে, এখানে আর এখানে।’
‘সব জায়গায় একসঙ্গে? তাজ্জব কথা! শুনুন, এই এখানে ব্যথা করতে পারে না। এখানে শুধু চুলকাতে পারে।’
‘কিন্তু আমার তো ব্যথা করছে।’
‘এখানে আপনার ব্যথা কেন করছে, বুঝতে পারছি না। হাঁ করুন দেখি।’
‘আ-আ-আ…’
‘আপনাকে “আ” বলতে বলিনি। বরং “য়্যু” বলুন।’
‘ও-য়া-উ… মুখ খোলা অবস্থায় “য়্যু” বলা যাচ্ছে না।’
‘দেখলেন তো।’
‘কী, ডাক্তার সাহেব?’
‘বুঝতে পারছি না, আপনার এখানে ব্যথা করছে কেন। অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে?’
‘এখানে আর এখানে—অনেক আগে থেকে। আর এখানে কিছুদিন হলো।’
‘তাহলে শুরুতেই ডাক্তার দেখাননি কেন? কেন এখানে আর এখানে ব্যথা শুরু হওয়ার পর ডাক্তারের কাছে ছুটে এসেছেন?’
‘যখন এখানে ব্যথা শুরু হয়েছে, ভেবেছিলাম, সেরে যাবে। আর যখন এখানে ব্যথা শুরু হলো, তখন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম, কিন্তু লাইনে বসে থাকতে থাকতে ওয়ার্কিং আওয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর এখানে ব্যথা শুরুর পর এলাম, সে তো দেখতেই পাচ্ছেন।’
‘পাচ্ছি। কোনো ওষুধ খেয়েছিলেন?’
‘খেয়েছিলাম। যখন এখানে ব্যথা শুরু হয়েছিল, ব্যাঙের গন্ধ শুঁকেছি, মাদি ভালুকের চর্বির সঙ্গে ওক, পপলার, বার্চ আর পাইনগাছের শিকড় মিশিয়ে বানানো মলম মেখেছি। যেমন লেখা ছিল নিরাময় নামের পত্রিকায়—নিজের চিকিৎসা নিজে করুন। পত্রিকায় ছাপা উপদেশ অনুযায়ী দিনে তিনবার মূত্র গ্রহণ করেছি; এ ছাড়া বন থেকে সংগ্রহ করা সকালের শিশিরে অনেকক্ষণ ডুবিয়ে রাখা ক্যামোমিলের নির্যাস খেয়েছি। এটা কোন পত্রিকায় পড়েছিলাম, সেটা অবশ্য মনে নেই।’
‘বুঝেছি। আপনাকে একটা মলম দিচ্ছি, যেখানে যেখানে ব্যথা করে, সেসব জায়গায় দিনে তিনবার মাখবেন। কাজ না হলে শিশিরে ডোবানো ওই ক্যামোমিলের নির্যাসটাও খাবেন, তবে খাদ্যগ্রহণের আগে নয়, পরে।’
দুই সপ্তাহ পরের কথা।
‘ডাক্তার সাহেব, আবার এলাম আপনার কাছে।’
‘আবার এলেন মানে কী? আপনি কি ডাক্তারের কাছে যান ক্যানটিনে যাওয়ার মতো নিয়মিত?’
‘ঠাট্টা করবেন না, ডাক্তার সাহেব। রোগীদের সঙ্গে ঠাট্টা করতে নেই। দুই সপ্তাহ আগে আমি এসেছিলাম আপনার কাছে। আপনি আমাকে মনে রেখেছেন?’
‘যত রোগী আমার কাছে আসে, সবাইকে মনে রাখলে আমি নিজেই রোগী বনে যেতাম।’
‘ডাক্তার সাহেব, এবার আমার চুলকানি শুরু হয়েছে। এখানে এখন ব্যথার বদলে চুলকানি।’
‘ওহ্, মনে পড়েছে! আপনাকে অভিনন্দন।’
‘ধন্যবাদ, ডাক্তার সাহেব। তবে চুলকানির চেয়ে ব্যথাটাই ভালো ছিল।’
‘মানে?’
‘প্রতিবেশিনী এসে অভিযোগ করল, আমি নাকি তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাই।’
‘কীভাবে?’
‘ভীষণ চুলকায় যে!’
‘হা-হা-হা…’
‘আপনি হাসছেন আর এদিকে আমার আবার চুলকানি শুরু হচ্ছে।’
‘অ্যাই, অ্যাই! টেবিলে ঘষবেন না! আরে! আলমারিতে ঘষছেন কেন! সরে আসুন ওখান থেকে বলছি!’
‘ডাক্তার সাহেব, বলেছিলাম না, ব্যথাটাই ভালো ছিল।’
‘আমারও সেটাই মনে হচ্ছে। এক কাজ করুন, আমার দেওয়া মলমটা মাখার দরকার নেই। ওই নির্যাসটাও আর খাবেন না। তাহলে ব্যথাটা আবার শুরু হবে, আশা করছি।’
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৪, ২০১২
Leave a Reply