মেন্যুতে চোখ বোলাতে বোলাতে ওয়েট্রেসের জন্য অপেক্ষা করছি। বিপরীত দিকের চেয়ারে বসা লোকটি খুব ভাবনামগ্ন অভিব্যক্তি নিয়ে খাবার খাচ্ছে সশব্দে।
‘হুমম,’ ব্যথা ভারাক্রান্ত গলায় দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। ‘খুব কষ্ট হচ্ছে তার জন্য।’
‘কার জন্য?’ কিছুক্ষণ দ্বিধা করে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম শেষমেশ।
‘স্ত্রীর জন্য,’ গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বলল। ‘সে একেবারে দেবীর মতো। না, দেবীর চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’
আমি বুঝে গেলাম, কারুর সঙ্গে নিজের কষ্ট ভাগাভাগি করে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তার এখন।
‘কোনো বিষাদময় ঘটনা ঘটেছে কি?’
‘সে আর বলতে! এই যে শালার মহামারি! আর এই হচ্ছে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের হাল!’ অসহায় ভঙ্গিতে চামচ নেড়ে জিব দিয়ে ঠোঁট চাটল সে। ‘কিছুদিনের মধ্যেই আমরা চাঁদে যেতে শুরু করব অথচ তুচ্ছ ভাইরাস আমাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। স্ত্রী ভুগছে তিন দিন ধরে।’
‘অবস্থা ভালোর দিকে যাচ্ছে না কিছুতেই?’
‘ব্যাপার হচ্ছে এই যে, আমি জানি না।’
‘বুঝতে পারলাম না আপনার কথা।’
‘যে মুহূর্তে সে ফ্লুতে আক্রান্ত হলো, আমি বাসা ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম যাতে সংক্রমিত না হই,’ দুঃখক্লিষ্ট দৃষ্টিতে সে তাকাল আমার দিকে। ‘আপনার ধারণা, বাসায় ওকে একা রেখে আসার সিদ্ধান্ত আমি খুব সহজে নিতে পেরেছি? ও একলা বাসায়, দেখার কেউ নেই, ফ্ল্যাটের ভেতরে ঠাণ্ডা…’
‘আমি নিশ্চিত জানি,’ ভদ্রতার সুরে বললাম তাকে, ‘আপনার হূদয় ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে।’
‘ঠিক তাই। একবার কল্পনা করে দেখুন: ওর কাছ থেকে আমি সংক্রমিত হলাম, রোগে পড়লাম। সে তখন অতি অবশ্য আমার সেবা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। কিন্তু ওর যে ৪০ ডিগ্রি জ্বর! না, এটা আমি হতে দিতে পারতাম না।’
চোখের জলের বড় একটা ফোঁটা তার গাল বেয়ে সশব্দে পড়ল ধোঁয়া ওঠা স্যুপের ওপর।
পূর্ববর্তী:
« সহজ অপারেশন
« সহজ অপারেশন
পরবর্তী:
সহ্যের পেয়ালা – আন্তোন নেভস্কি »
সহ্যের পেয়ালা – আন্তোন নেভস্কি »
Leave a Reply