ছোট্ট এক রসগল্প লিখেছিলাম। সেটার শেষাংশ ছিল এ রকম: ‘সশব্দে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেলাম আমি। এবং আর ফিরলাম না স্ত্রীর কাছে।’
লেখাটা প্রকাশিত হলো।
সক্কালবেলা ফোন করল এক বন্ধু।
‘তোমার লেখাটা পড়লাম,’ বলল সে। ‘বেশ মানসম্মত। আচ্ছা, তুমি এখন কোথায়?’
‘অফিসে।’
‘আমি সেটা জানতে চাইনি। বলছিলাম, এখন বাস করছ কোথায়?’
‘কোথায় মানে?’ ভারি অবাক হলাম আমি। ‘যেখানে ছিলাম, সেখানেই আছি।’
‘ওহ, বুঝেছি,’ বলে বন্ধুটি ফোন রেখে দিল।
কর্মদিবসের একেবারে শেষের দিকে ফোন করল আমার মায়ের বান্ধবী।
‘আমার কথা মন দিয়ে শোন,’ খুব আন্তরিক শোনাল তার গলা। ‘দুপুরের খাবার খাবে তুমি ভেরা আন্টির বাসায়। তার সঙ্গে আমি কথা বলে রেখেছি। রাতের খাবার খেতে আমাদের বাসায় স্বাগতম। তবে নাশতার ব্যবস্থাটা তোমাকে নিজেই করে নিতে হবে।’
পরদিন সকালে দরজায় মুহুর্মুহু ধাক্কা। খুলে দেখি, শাশুড়ি দাঁড়িয়ে। ভেজা ছাতাটা থেকে পানি ঝাড়লেন আমার দিকে।
‘এখন খুলে বলো তো, কী হয়েছে তোমাদের মধ্যে?’
‘কিছুই হয়নি তো, মা!’ আমার স্ত্রী জানাল।
‘কথা ঘুরিয়ো না। আমাদের সেমাফোরভে সবাই তোমাদের নিয়েই আলোচনা করছে। কী লজ্জা আর কলঙ্ক!’
‘কিন্তু ওটা ছিল একটা গল্পমাত্র,’ আমি বললাম সবিস্ময়ে।
‘ভাগ্যিস উপন্যাস নয়! বিশদ বর্ণনাসহ।’
শাশুড়ির বোমাবর্ষণ চলল টানা দুই ঘণ্টা। ফলও হলো তাতে। আমার স্ত্রী আবেগ সামলাতে না পেরে কেঁদে ফেলে যোগ দিল শাশুড়ির পক্ষে।
‘আমি জানতে চাই, আর কত দিন তোমার সাহিত্যিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার গিনিপিগ হয়ে থাকতে হবে আমাকে? তুমি অন্য কাউকে নিয়ে লিখতে পারো না?’
‘এক মিনিট!’ থামিয়ে দিলাম তাকে। অসহায় ক্রোধে মুঠো পাকিয়ে বললাম, ‘গতবার আমি লিখেছিলাম ঘটনাক্রমে আমার সহযাত্রী বনে যাওয়া মারিয়া নিকোলায়েভনাকে নিয়ে। কী হয়েছিল এরপর? ঈর্ষাকাতর হয়ে তুমি বারবার বলছিলে, “আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, ক্ষমা করে দেব, শুধু বলো, তার সঙ্গে তোমার কী হয়েছিল।”…এটা একেবারে সহ্যের অতীত!’
সশব্দে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেলাম আমি।
Leave a Reply