একদিন পথে এক মেয়ে এগিয়ে এল আমার দিকে। তারপর ভীতস্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘দৈবক্রমে আপনি কি বেজগিটার বাজান?’
আমি মাথা নাড়ালাম দুপাশে।
‘দারুণ তো!’ খুশি হয়ে উঠল মেয়েটি। ‘আমিও বাজাই না। আমার নাম আলা। তোমার?’
তার মাথার চুলগুলো চমৎকার, মনোহর মুখমণ্ডল, আকর্ষণীয় নাক।
তাকে এড়াতে একেবারেই অন্য দিকে তাকিয়ে আমি বললাম, ‘আমি মেয়েদের সঙ্গে রাস্তায় পরিচিত হই না।’
‘তাহলে চলুন, ওই রুটির দোকানে যাই’, মেয়েটি প্রস্তাব দিল।
শুনে দয়া করে হাসলাম বটে, তবে মনে মনে ভাবলাম: ‘রসবোধ আছে বেশ। মনে হচ্ছে, একঘেয়ে লাগবে না তার সঙ্গে। তবে কি ফিগারটা নিখুঁত নয় তার?’
আড়চোখে দেখে নিয়ে নিশ্চিত হলাম, তার ফিগার নিখুঁত।
‘মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে’, জানালাম তাকে নীরসভাবে।
‘কিন্তু এখন তো সবে দুপুর!’ অবাক হলো সে।
‘বিশ্লেষণী চিন্তাক্ষমতা আছে’, মুগ্ধ হয়ে ভাবলাম আমি। ‘অসাধারণ মেয়ে সে।’
‘দিদিমা টেনশন করবে’, বললাম বিড়বিড় করে।
‘কিন্তু তোমার তো মনে হয় দিদিমা নেই’, ধূর্তভাবে হাসল সে।
‘কী অন্তর্ভেদী দৃষ্টি তার!’ ভারি বিস্ময় হলো আমার। ‘ওকে আমাদের আড্ডায় নিতে হবে। সকলেই বান্ধবী নিয়ে আসে, শুধু আমিই সঙ্গিনীহীন। বয়স পঁচিশ হলো, অথচ এখনো ব্যাচেলর।’
‘তোমার কি সিরিয়াস উদ্দেশ্য আছে? নাকি শুধু সময় কাটানোর ধান্ধা?’ আক্রমণে নামলাম আমি।
সিরিয়াস উদ্দেশ্য আছে বলে মেয়েটি নিশ্চিত করল।
‘বিবাহ রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে আপত্তি করবে না তো?’
না-সূচক মাথা নাড়ল মেয়েটি।
‘বিয়ের পরে আমরা থাকব কোথায়?’
‘এক রুমের একটা ফ্ল্যাট আছে সমস্ত সুযোগ-সুবিধেসহ।’
‘শাশুড়িও আমাদের সঙ্গে থাকবে নাকি?’
‘না, তার নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে।’
‘রান্না করতে পারো?’
সে রন্ধন প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট দেখাল।
‘কাপড়চোপড় ধোয়া?’
‘ওয়াশিং মেশিন কিনব আমরা। তবে আমি তো একা সবকিছু করে উঠতে পারব না। তোমাকেও হাত লাগাতে হবে।’
‘সম্ভাবনা কম।’
‘লাগাতেই হবে’, বলল সে।
‘সম্ভাবনা কম’, উচ্চারণ করলাম আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।
‘তাহলে আর কী…’, বলে মেয়েটি মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল।
‘সব মেয়েই এক রকম’ মনে হলো আমার। আমি হাঁটা ধরলাম অন্যদিকে।
Leave a Reply