সার্টিফিকেটটা ছিল যেকোনো সার্টিফিকেটের মতোই। গতানুগতিক। ‘টু হুম ইট মে কনসার্ন। অত্র সার্টিফিকেটের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাইতেছে যে, পৃথিবী গোলাকার।’
ব্যস। এরপর স্বাক্ষর আর সিলের জন্য ফাঁকা জায়গা।
—গোলাকার?—জিজ্ঞেস করলাম।
—ইচ্ছে হলে লিখে দিন সমতল। আমার কোনো সমস্যা নেই। শুধু সার্টিফিকেটটা সঙ্গে থাকলেই হলো। নইলে অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না। সিল-ছাপ্পড় না থাকলে সন্দেহ করে।
শুনে রাগ চেপে গেল আমার।
—বিশ্বাস করে না মানে? মগের মুল্লুক নাকি! এই পারমাণবিক আর মহাশূন্যযাত্রার যুগে! যখন আমাদের মাথার ওপরে সব সময় ঘুরছে অজস্র কৃত্রিম উপগ্রহ! যখন প্লেনে পুরো পৃথিবী চক্কর দিতে সময় লাগে কয়েক ঘণ্টা! তা ছাড়া যেকোনো স্কুলবালকও তো জানে এই কথা! ছোট-বড় বিশ্বকোষগুলোতেও স্পষ্টভাবে লেখা আছে…
দর্শনার্থী দুই হাত ঝাঁকাল শুধু। তারপর বলল:
—হুবহু ঠিক এই কথাগুলোই আমি তাদের বলেছি। কিন্তু তারা আমার কথা বিশ্বাস করেনি। সার্টিফিকেট চায়।
সিলটা টেবিলে তুলে কলমটা হাতে নিলাম, সার্টিফিকেটটা আবার পড়লাম পুরোটা এবং চিন্তায় পড়ে গেলাম বেশ।
ওদিকে দর্শনার্থী শান্ত হচ্ছে না কিছুতেই। সে বলল:
—আমি তাদের ভালোমতো বুঝিয়ে বলেছি, বলেছি কোপারনিকাস প্রমাণ করে গেছেন এ কথা, গ্যালিলিওকে অনেক ভুগতে হয়েছে এই সত্য বলার কারণে, আর খ্রিষ্টানরা তো ব্রুনোকে পুড়িয়েই মেরেছে। ওরা পাত্তা দেয়নি আমার কথায়। মাথা ঝুঁকিয়ে বলেছে, বর্তমান যুগে সার্টিফিকেট ছাড়া সব কথাই অচল।
আমি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলাম। পৃথিবী গোলাকার—এ কথাটা জানা এক কথা, আর সেটা সার্টিফিকেটে লেখা—সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। তার ওপরে আবার সই করা! হঠাৎ যদি ওপর থেকে নির্দেশনা আসে—এখন থেকে পৃথিবী কিউব-আকারের বলে গণ্য করা হবে? তাহলে? তখন দায়িত্ব নেবে কে? গ্যালিলিও?
—না,—দৃঢ়কণ্ঠে আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে সিলটা সরিয়ে ফেললাম টেবিল থেকে। পৃথিবীর গোলাকৃতি বিষয়ে কোনো দায়িত্ব আমি নিতে পারব না। সে ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়নি।
দর্শনার্থীকে হতচকিত মনে হলো।
—সে কেমন কথা! আপনিই না একটু আগে বললেন, পারমাণবিক যুগ আর কৃত্রিম উপগ্রহের কথা! বললেন ছোট-বড় বিশ্বকোষের কথা!
দর্শনার্থী যখন হাঁটা ধরল দরজার দিকে, তখন তাকে এত অসুখী দেখাচ্ছিল যে তাকে কয়েকটি সান্ত্বনাবাক্য না বলে পারলাম না।
—শুনুন, এতটা হতোদ্যম হবেন না। আরেকটু ওপর মহলে চেষ্টা করে দেখুন। জীবনে কখনো আশা হারাবেন না।
পূর্ববর্তী:
« সার্টিফিকেট
« সার্টিফিকেট
পরবর্তী:
সার্টিফিকেট প্ৰত্যাখ্যান »
সার্টিফিকেট প্ৰত্যাখ্যান »
Leave a Reply