সাম্প্রতিককালে রাশিয়ার দুর্নীতিবাজদের মধ্যে দেশপ্রেম জেগে উঠেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডলার ও ইউরোর পাশাপাশি তারা এখন ঘুষ নিচ্ছে রুবলেও।
ঘুষের ওপর ট্যাক্স বসানো যেতে পারত, তবে সেটা করলে ঘুষদাতার ওপর আরও চাপ পড়বে। ঘুষ দেওয়ার সময় তাতে ট্যাক্সের টাকাটাও জুড়ে দিতে হবে যে!
রাশিয়ায় দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। কারণ তা নির্মূল করতে গেলে সেটাকে আগাগোড়া জানতে হবে। জানতে হলে তাতে অংশ নিতে হবে। আর একবার তাতে অংশ নিতে শুরু করলে…
রাশিয়ায় ‘পিতৃভূমির বীর দিবস’ ও ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ দিবস’ একই দিনে (৯ ডিসেম্বর) কেন? কাহিনি কী?
যে দেশে খামের সাইজ রুবলের নোটের চেয়ে একটু বড়, সে দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ সফল হওয়ার সম্ভাবনা কীভাবে থাকবে!
দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা আর অ্যালকোহলিজমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ভোদকা বরাদ্দ করার ভেতরে কোনো তফাত নেই।
‘মনোপলি’ খেলার রুশ ভার্সনে ঘুষ দেওয়ার পদ্ধতি যোগ করা হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের দৃষ্টিতে দুর্নীতি হচ্ছে রূপবতী রমণীর মতো, যার সঙ্গে যুদ্ধ করার চেয়ে বন্ধুত্ব করা লাভজনক।
—ঘুষ ও দুর্নীতির ভেতরে তফাত কী?
—ঘুষ মানে হচ্ছে ‘নিল ও কাজ করে দিল’, আর দুর্নীতি হচ্ছে ‘নিল বটে, তবে কাজ করল না’।
প্রায়ই বলতে শুনি: দুর্নীতির সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ যুদ্ধ ঘোষণা করা উচিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, রাশিয়ার সংসদ সদস্যদের শতকরা ৯০ জন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল অতীতে। বাকি ১০ জন জড়িত বর্তমানে।
—আমার মনে হয়, জাতি হিসেবে সভ্য হওয়ার সময় আমাদের এসেছে। আমাদের উচিত হবে ভোদকা পান ত্যাগ করা, মেয়েদের সম্মান করা এবং চুরি করা ও ঘুষ খাওয়া অতি অবশ্য বন্ধ করতে হবে।
—তা বটে, কিন্তু সে ক্ষেত্রে জাতি হিসেবে আমরা আমাদের স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলব নাকি?
সাংসদ পেত্রোভ ঘুম ভাঙার পরে উঠলেন ১০ হাজার ডলার থেকে, দু’পা ঢোকালেন ১০০ ডলারে, গেলেন পনেরো হাজার ডলারে, মাজলেন পাঁচ হাজার ডলার, ২০০ ডলার খেলেন, পরলেন ১২ হাজার ডলার, তারপর আড়াই লাখ ডলারে বসে রওনা দিলেন সংসদ ভবনের উদ্দেশে। সেখানে তিনি আজ বক্তব্য দেবেন ‘রাশিয়ায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ বিষয়ে।
—দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব নয় কেন?
—কারণ প্রায় প্রত্যেক যোদ্ধাই মনে মনে দুর্নীতিবাজ হওয়ার ইচ্ছে লালন করে।
দুর্নীতির অবিনশ্বরতার সূত্র: দুর্নীতির উদ্ভব কোনোখান থেকে হয় না, কোথাও তা বিলুপ্তও হয় না। কেবল তা এক ক্যাবিনেট থেকে যায় অন্য ক্যাবিনেটে।
ঘুষ খেতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ার পর যখন কেউ বলে ‘ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে’, তার এই কথার প্রকৃত অনুবাদ আসলে এ রকম, ‘বেবাকেই খায়, কিন্তু আমি খাইলেই দোষ!’
—বিচার বিভাগের লোগোতে Themis-এর যে ছবি আছে, তাতে তার চোখ বাঁধা কেন?
—ঘুষ নেওয়ার সময় সে ঘুষদাতার চোখে চোখ ফেলতে লজ্জা পায় বলে।
গতকাল মস্কোর প্রধান স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় দুর্নীতির সঙ্গে যুদ্ধ প্রতিযোগিতা। এতে জয় হয়েছে বন্ধুত্বের।
যদি কোনো সরকারি বিভাগে ঘুষের প্রচলন নেই বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে বুঝতে হবে, ওই বিভাগের কোনো প্রয়োজনীয়তাই আসলে নেই।
রাশিয়ায় আইনের অক্ষরের চেয়ে ঘুষের অঙ্ক বেশি শক্তিশালী।
রাশিয়ায় ধনী হওয়ার দুটি পথ আছে: হয় হতে হবে দুর্নীতিবাজ, নয়তো দুর্নীতিবিরোধী যোদ্ধা।
ঘুষ ব্যাপারটি অধিকাংশ লোকেরই অপছন্দ। কারণ তারা ঘুষ শুধু দিয়েই যায়, ঘুষ তারা পায় না।
—রাশিয়াকে দুর্নীতিমুক্ত করার উপায় কী?
—‘রাশিয়া’ ও ‘দুর্নীতি’, এই শব্দ দুটি পাল্টে দেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
ঘুষ না দিলে রাশিয়ায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করানো সম্ভব নয়।
উচ্চপদস্থ কাস্টমস অফিসারের জন্মদিন অচিরেই। তাকে কী উপহার দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে তার সহকর্মীরা বসে আলাপ করছে।
—সবাই মিলে চাঁদা তুলে একটা বিএমডব্লিউ কিনে দিলে কেমন হয়?
—না, এত কিপটেমি ঠিক নয়। তার চেয়ে বরং অতিরিক্ত এক শিফট ডিউটি তাকে উপহার দেওয়া যেতে পারে।
পুলিশে চাকরি নেওয়ার পর টানা চার মাস বেতন না তোলায় ডেকে পাঠানো হলো ইভানভকে, জানতে চাওয়া হলো এমন অদ্ভুত আচরণের কারণ। ইভানভ বলল, এই চাকরিতে বেতনও পাওয়া যায় নাকি! চাকরিতে যোগ দিয়ে ইউনিফর্ম আর পিস্তল পেয়ে আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে বলা হলো, ‘এখন যেভাবে পারো, করে খাও।’
—অনেক সময়ই ‘দুর্নীতি নির্মূল’ না বলে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ বলা হয় কেন?
—যুদ্ধশেষে বিজিতদের সব সম্পদ বিজয়ী যোদ্ধাদের দখলে চলে আসে বলে।
‘হয় ঘুষ দিন, নয়তো সবকিছু আইন মোতাবেক করা হবে কিন্তু!’ এমন কথা বাস্তব কেবল রাশিয়াতেই।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৫, ২০১১
Leave a Reply