ঘুম ভাঙল সকালে। চকচকে সূর্য বাইরে, গান গাইছে পাখিরা, অফিসে যেতে হবে না। সন্ধ্যায় টিভিতে ফুটবল। আহা! আলোকিত হয়ে উঠল আত্মার ভেতরটা।
বিছানা ছাড়লাম, মুখ-হাত ধুয়ে আফটার শেভ মাখলাম আচ্ছামতো। তারপর নাশতা সেরে আর্মচেয়ারে বসলাম পত্রিকা নিয়ে। ঠিক তখন স্ত্রী এসে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিল হাতে:
—বাজারে যাও। আলু কিনতে হবে।
অন্ধকার নেমে এল আত্মার ভেতরে।
কিন্তু উপায় তো নেই! কাপড়চোপড় পাল্টে রওনা দিলাম। বাসস্টপের দিকে হাঁটছি, দেখি, আমার বাসটা আসছে। খুশি হয়ে স্প্রিন্ট লাগালাম। এক দৌড়ে ঢোকার চেষ্টা করলাম দরজা দিয়ে। ব্যর্থ। অন্য দরজা দিয়ে ঢুকতে গেলাম। আবার ব্যর্থ। মনটা খারাপ হলো। এ-দরজা ও-দরজা করতে করতেই সক্লেশে বন্ধ হয়ে গেল বাসের দরজা দুটো। কী আর করা! হেঁটেই রওনা দিলাম।
বাজারে গিয়ে দেখি, ভিড়ে ভিড়াক্কার! তবু নাগাল পাওয়া গেল আলুবিক্রেতা এক বৃদ্ধার। খুশি হয়ে উঠল মনটা। ব্যাগভর্তি করে আলু নিয়ে ওজন করলাম, তারপর দাম মিটিয়ে দিয়ে হাঁটা ধরলাম নিজের ক্রয়সাফল্যে আত্মতৃপ্ত হয়ে। দেখি, আরেকজন আলু বিক্রি করছে। এগিয়ে গেলাম কাছে। মানে শ্রেয়, দামেও কম। মনটা খারাপ হলো।
হনহন করে হাঁটতে শুরু করলাম বাজারের গেট লক্ষ করে। আরও বেশি মন খারাপ যাতে না হয়, তাই দুপাশে তাকালাম না একেবারেই। গেটের মুখে দেখি, ব্যারেল থেকে বিয়ার বিক্রি করছে। লাইন খুব দীর্ঘ নয়। মনটা খুশি হলো। বড় এক গ্লাস ভর্তি করে নিয়ে একপাশে সরে গিয়ে দাঁড়ালাম। চুমুক দেওয়ার অধীর প্রতীক্ষা। মিনিট খানেক অপেক্ষা করে ফেনার ওপরে ফুঁ দিয়ে এক ঢোক গিললাম। বিয়ার তো একদমই ঠান্ডা নয়! মনঃক্ষুণ্ন হলাম খুবই। কোনোমতে আধা গ্লাস খেয়ে বাকিটা ঢেলে দিলাম মাটির ওপরে। তারপর বাসার পানে।
বাসার কাছে আসতেই দেখা প্রতিবেশীর সঙ্গে। এ-কথা ও-কথা বলতে বলতে আমাদের এই সাক্ষাৎ উদ্যাপন করার প্রস্তাব দিল সে। খুশি হয়ে উঠলাম। পকেট হাতড়ে খুচরো পয়সা জড়ো করে বুঝলাম, এ পয়সায় কুলোবে না। মনটা খারাপ হলো আবার। আরও পাঁচ মিনিট তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে গেলাম বাসায়।
দরজা খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকেই শুনি, স্ত্রী রান্নাঘরে কার সঙ্গে জানি কথা বলছে। ভাবলাম, মা বেড়াতে এসেছে। খুশি হয়ে উঠল মনটা। রান্নাঘরে ঢুকলাম তড়িঘড়ি করে। দেখি, শাশুড়ি উদয় হয়েছে কোত্থেকে! মনটা বড়ই খারাপ হলো। আর্মচেয়ারে বসে ভাবলাম: এ কেমন জীবন? ঠিক যেন জেব্রা ক্রসিং—জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। কিন্তু সাদা অংশ তাতে এত কম কেন? সাদা রং চুরি করে নাকি কেউ?
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২১, ২০১১
Leave a Reply