কাপড়চোপড় ধোয়ার সিদ্ধান্ত নিল জামকভ। টুকটাক কিছু। একটা শার্ট, আইসল্যান্ডের দুটো পতাকা (কেন জানি ছিল তার কাছে)। বউকে তো আর এই তুচ্ছ ব্যাপারে অনুরোধ করা যায় না! আর তার চেয়ে বড় কথা, তাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে আগেই। তো, ধোলাই-করিতব্য বস্তুগুলো ওয়াশিং মেশিনে ঢুকিয়ে দিয়ে যেই অন করল সে, বেল বেজে উঠল দরজায়। কালো ইউনিফর্ম পরা দুজন লোক।
‘ওয়াশিং মেশিন চালানোর লাইসেন্স আছে?’ প্রশ্ন করল তারা।
ইউনিফর্ম পরা লোকদের জামকভ শ্রদ্ধা করে এবং ভয় পায় কিছুটা। সে ওয়াশিং মেশিনের সব কাগজপত্র বের করে দেখাল।
‘এসব নয়,’ হাত নেড়ে বলল তাদের একজন। ‘ওয়াশিং মেশিন চালানোর লাইসেন্স। পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স পাওয়ার কথা আপনার।’
‘জীবনে প্রথম শুনছি এমন কথা,’ থতমত খেয়ে জামকভ বলল।
‘আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা কাউকে দায়িত্বমুক্ত করে না,’ অতিথিরা বুঝিয়ে বলল তাকে।
জামকভকে দিতে হলো জরিমানা এবং অতিথিরা চলে গেল।
‘ব্যাটারা আবার এসে হাজির হবে না তো!’ ভাবল জামকভ এবং আবার চালু করল মেশিন। ঠিক তখনই বেল বেজে উঠল দরজায়।
‘লাইসেন্স ছাড়াই মেশিন চালানো অব্যাহত রেখেছেন?’ জিজ্ঞেস করল ইউনিফর্ম পরা ওই লোক দুটোই।
‘তো, হয়েছেটা কী!’ দুই কাঁধ ঝাঁকিয়ে জামকভ বলল।
‘হয়েছেটা কী মানে!’ শ্লেষমাখা স্বরে বলল এক ইউনিফর্মধারী। ‘পাশের অঞ্চলে এক লোক লাইসেন্স ছাড়া ওয়াশিং মেশিন চালাচ্ছিল, তখন সেটা বিস্ফোরিত হয়। পুরো দালানটাই উড়ে গেছে।’
আবার জরিমানা দিয়ে দরজা লাগিয়ে পুনরায় ওয়াশিং মেশিন অন করল সে। মিনিট না ঘুরতেই আবার বেল।
‘অর্থাৎ আপনি আইন মানেন না!’ সিদ্ধান্ত টানল লোক দুটি। ‘আপনাকে গ্রেপ্তার করা হলো।’
হকচকিত জামকভ মেশিন বন্ধ করে চলল অপরিচিত এ লোক দুটির সঙ্গে। অনেকক্ষণ হাঁটার পর তারা এসে থামল জীর্ণ পরিত্যক্ত একটি বাড়ির কাছে।
‘এখানে,’ ঘরের দরজা খুলে তারা বলল, ‘এটা হাজত।’
‘হাজতের চেহারাটা কেমন জানি,’ অবাক হয়ে জামকভ বলল।
‘আসলে আমাদের ডিপার্টমেন্টটা খোলা হয়েছে বেশি দিন হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই মোটা দেয়াল আর গরাদওয়ালা সেল বানানো হবে এখানে।’
ভেতরে একেবারে ঘুরঘুট্টি অন্ধকার নয়, অল্পস্বল্প আলো আসছে ফুটোফাটা দিয়ে। জামকভ বসে রইল সেখানে। পেরিয়ে গেল এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা, তিন ঘণ্টা…।
‘অদ্ভুত কাণ্ড তো!’ ভাবল জামকভ। ‘খাবার নিয়ে আসছে না কেউ, জেরা করতেও ডাকছে না…আর সম্প্রতি খোলা এ ডিপার্টমেন্টটাই বা কিসের?’
ভাগ্যিস, ঘরের এক কোণে একটা কোদাল পড়ে ছিল। ঘণ্টা খানেক সময় লাগল সুড়ঙ্গ খুঁড়তে। বের হয়ে জামকভ হাঁটা ধরল বাড়ির দিকে। ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখল, টিভি, ফ্রিজ, সোনার প্রলেপ দেওয়া চামচের সেট—সব উধাও। ‘কেন যে আমি অবৈধভাবে ওয়াশিং মেশিন চালু করেছিলাম!’ খুব অনুশোচনা হলো জামকভের। ‘শাস্তি হিসেবে আমার সব জিনিসপত্র জব্দ করে নিয়ে গেছে।’
ওয়াশিং মেশিনটা অবশ্য রেখে গেছে। অবশ্য ওটা থাকা বা না থাকা একই কথা। লাইসেন্স ছাড়া চালানো তো যাবে না। কিন্তু লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষা কোথায় দিতে হয়, সেটাও তো তার জানা নেই!
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৪, ২০১১
Leave a Reply