এক বিয়েপাগল প্রবীণ লোক। তার বিবাহিত জীবনের কুড়ি বছর অতীত হয়েছে। দুটি সন্তানও আছে; এবং চুলে ইতিমধ্যে পাক ধরেছে। তো, সেই লোকের খায়েশ হলো আরেকখান বিয়ে করার এবং বউ হতে হবে তরতাজা তরুণী। যে কথা সেই কাজ। বিয়ে সে করেই ছাড়ল। ঘরে এল এক তরুণী এবং দুই বউ হলে যা হয়, তা-ই শুরু হলো। সতিনে সতিনে ঈর্ষা-বিবাদ থেকে চুলোচুলি, গালাগালি, খামচাখামচি, অর্থাৎ সপত্নী বিবাদ চরমে উঠল। এ নিয়ে পারিবারিক বিচার, সালিস-বৈঠকের পর সাব্যস্ত হলো: দুই বউ দুই বাড়িতে থাকবে। তাদের স্বামী মাসের অর্ধেক দিন বড় বউয়ের কাছে আর বাকি অর্ধেক ছোট বউয়ের কাছে থাকবে। এক টেঁটিয়া তরুণ বলে ওঠে, ‘মুরব্বি, ছোট বউয়ের ওপর কিছু অবিচার অইল না? বড় হেরে ২০ বছর স্বামীসঙ্গ পাইছে, নতুন বউটা স্বামীর বাড়িত আইয়াই অর্ধেক দিন স্বামীছাড়া থাকব! হেরে অন্তত ৩১শা মাসের বাড়তি দিনডা দেন; আর মাস তিরিশার কম অইলে তার পনেরো দিন ঠিকই থাহুক।’ মুরব্বিরা মুচকি হেসে গম্ভীর হয়ে যান।
পারিবারিক মুরব্বিদের ফয়সালা অনুযায়ী, মাসের প্রথম দিকের হিস্যা পেল ছোট বউ। স্বামীকে পেয়ে প্রথমেই তার কাজ হলো, নাপিত দিয়ে দাড়ি ভালো করে খেউরি করিয়ে পরে সাবান দিয়ে গোসল করানো। তারপর স্বামীর চুলে তেল দিয়ে শরীরে একটু পাউডার মেখে ফিটফাট এবং চেহারা-সুরতে প্রায় তরুণও করে ফেলল ছোট বউ। বউ এখন খুশি, ভালো লাগছে তার। দীর্ঘশ্বাস পড়ছে না ঘন ঘন। মুখে বরং একচিলতে হাসি।
খাওয়াদাওয়ার পর এক খিলি পান সেজে বিছানায় শোয়া স্বামীর মুখে গুঁজে দিয়ে বলে, ‘আমার কাজ শেষ হয় নাই।’
স্বামী: আবার কী বাকি রইল?
বউ: আছে, তুমি ঘুমাও। আমি ‘শোন’ দিয়া পাকা চুল বাছি।
পাকা চুল ফেলে স্বামীকে বউটি অনেকটা তারুণ্যমণ্ডিত করে ফেলে।
কটা দিন তাদের আনন্দেই কাটে। বউ যে ‘আমার বুইড়া সোয়ামি’ বলে হাসে, তার উত্তরে সে বলে, তুমি তো আমারে আবার জোয়ানই কইরা ফালাইছ!’
এবার বড় বউয়ের পালা শুরু হয়। সে মনে মনে বলে, সব্বোনাশ! এ দেখি শিং ভাইঙ্গা বাছুরের দলে ঢুকছে! বয়স তো কমাইয়া ফালাইছে, পাকা চুলও তুইলা ফালাইছে। অহন তো ওই ঢেমনির সঙ্গেই পরায় (প্রায়) মানানসই! সে বুদ্ধি ঠিক করে ফেলে।
‘তুমি দাড়ি কাটবা না! দাড়িতে তোমারে সুন্দর লাগে। আর মাইনষে খারাপ কইব। কইব, বুইড়া ব্যাটা ছোকড়া সাজছে। আড়ালে-আবডালে হাসব।’
দাড়ি খোঁচা খোঁচা হয়। কাঁচা-পাকা দাড়ি দেখা যায়। এখন বুড়া বুড়া লাগে। বড় বউ খুশি। তার মনে হয়, এখন তার সঙ্গে মানানসই।
বড় বউ দুপুরবেলা পান সেজে দেয়। গা টিপে দিয়ে বলে, ‘আরাম করে ঘুমাও, আমি চুল বাছি।’
প্রবীণ মনে মনে হাসে। ভাবে, মন্দ হয় নাই। দুই পক্ষেরই যত্ন পাইতেছি। এও তো দেখি এক ব্রিটিশ পলিসির সুযোগ। তৃপ্তি ও নিজের বুদ্ধির প্রশংসা করতে করতে সে ঘুমিয়ে পড়ে। ওদিকে বড় বউ চুল তুলতে গিয়ে শুধু কাঁচা চুল তোলে। বুড়া দেখানোর জন্য পাকাগুলো রেখে দেয়।
এভাবে চলে ছোট বউ, বড় বউয়ের পালা এবং কয়েক মাসের মধ্যেই তার মাথা কেশবিহীন।
লোকটি তখন ঘটনা বুঝতে পেরে ছড়া কাটে—
‘বিয়ার নাম নাগরালি
বিয়ার নাম সাগরালি
দুই বিয়াতে মোর
চান্দি খালি।’
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ১০, ২০১১
Leave a Reply