Aesop (বা Aisopos) পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রিসে তাঁর গল্পের জন্য খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস বলেন, তিনি মিসরের ফারাও আমাসিসের সময়কার লোক। সামস দ্বীপে বাস। ওখানেই ইয়াডমন নামে এক নাগরিকের ক্রীতদাস ছিলেন তিনি। তবে অনেকের মতে, ঈশপ ছিলেন ওই ইয়াডমনের আত্মীয়। জন্মসূত্রে ঈশপ ছিলেন থ্রেসিয়ান বা ফ্রাইজিয়ান। শোনা যায়, ডেলফিয়ার এক মন্দির থেকে একটি বাটি চুরির অপরাধে ডেলফিয়াবাসী তাঁকে পাহাড়ের চূড়া থেকে ফেলে হত্যা করে। অ্যারিস্টোফেনেসের মতে, মন্দিরের বাটিটি ঈশপের ঝোলার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে চোর অপবাদে তাঁকে হত্যা করা হয়। ঈশপ দেখতে ছিলেন কদাকার কিন্তু বুদ্ধিতে ছিলেন অপরাজেয়, রঙ্গরসে অদ্বিতীয়। তিনি অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আর তোতলামি করে শোনাতেন তাঁর শিক্ষাপ্রদ অমর কাহিনিগুলো।
একদঙ্গল লোকের চেয়ে একটি লোকের দাম অনেক। সেই কথাটা জানানোর জন্যই এই গল্প—
এক ভদ্রলোক তাঁর তিন মেয়ে রেখে মারা গেলেন। তাদের মধ্যে এক মেয়ে বেপরোয়া, তবে সুন্দরী। সে কটাক্ষপাতে অনেক পুরুষকেই ঘায়েল করে থাকে। দ্বিতীয় মেয়েটি খুব হিসাবি, চরকায় উল বুনতে জানে। তৃতীয়টি একটি মদের পিপে, আর দেখতেও ভালো নয়।
বৃদ্ধ ভদ্রলোক তাঁর স্ত্রীকে উইলের অছি বা ট্রাস্টি নিযুক্ত করে গেছেন। তাতে নির্দেশ দেওয়া আছে, তাঁর সম্পত্তি এমন সমানভাবে মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে, যাতে তারা তাদের ভাগের সম্পত্তি নষ্ট না করতে পারে। আর একটি শর্ত, যদি মেয়েরা সম্পত্তি না রাখতে চায়, তবে তারা প্রত্যেকে তাদের মাকে হাজার টাকা করে দেবে।
এই উইলের খবরটা সারা এথেন্সে ছড়িয়ে পড়ল। মা তো মুশকিলে পড়লেন। আইনজীবীদের বাড়িতে ঘুরতে লাগলেন তাঁর স্বামীর উইলের বিষয়ে বোঝার জন্য। কিন্তু কেউ কোনো হদিস দিতে পারলেন না। সত্যিই তো, মেয়েরা যদি সম্পত্তি না চায় বা সেই সম্পত্তি ভোগ না করতে পারে, সে ক্ষেত্রে এমন কোনো নগদ টাকার ব্যবস্থা নেই, যা দিয়ে তারা মায়ের প্রাপ্য মিটিয়ে দিতে পারবে।
অনেক দিন অনেক রকম চিন্তাভাবনা করেও যখন ওই উইলের মর্মার্থ বোঝা গেল না, তখন মা ঠিক করলেন, তাঁর ইচ্ছামতোই তিনি এই সম্পত্তি মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দেবেন। তিনি সম্পত্তির হিসাব করতে বসলেন।
মা তাঁর বেপরোয়া সুন্দরী মেয়েটাকে দিলেন ভালো ভালো পোশাক, দামি অলংকার আর সেই সঙ্গে কাজের জন্য খোজা আর বালক ভৃত্যদের।
তাঁর খাটিয়ে আর হিসাবি মেয়েকে দিলেন জমিজমা, গরু-ভেড়া, খামার বাড়িটা, লাঙল-বলদ, চাষের যন্ত্রপাতি, চাষি ইত্যাদি।
আর মাতাল, দেখতে ভালো নয় মেয়েকে দিলেন মদের ভাঁড়ার, পিপেভর্তি আঙুরের মদ, একখানা বড় বাড়ি বাগানসমেত।
মা যখন পাড়াপড়শি ও আত্মীয়স্বজনের মতামত নিয়ে এভাবে মেয়েদের স্বভাব অনুযায়ী সম্পত্তি ভাগ করে দেবেন ঠিক করেছেন, সে সময় সেই লোকজনের মধ্যে দেখা গেল ঈশপকে।
ঈশপ সব শুনে বললেন, ‘এ তোমরা কী করছ? ভদ্রলোকের উইলের মর্ম তোমরা কেউ বুঝতে পারনি। হয়তো ভদ্রলোক এই কাণ্ড দেখে তাঁর কবরের মধ্যে নড়েচড়ে দুঃখ প্রকাশ করছেন।’
‘তাহলে কী করা হবে?’ সবারই প্রশ্ন। সবাই অবাক।
‘এ তো অতি সোজা কাজ।’ ঈশপ বললেন, ‘বাগানসমেত ওই বড় বাড়িখানা, মদের ভাঁড়ার ওই হিসাবি খাটিয়ে মেয়েটিকে দেওয়া হোক। সাজ-পোশাক, হীরা-মুক্তা-অলংকার, দাসদাসী সব দেওয়া হোক দেখতে ভালো না মাতাল মেয়েটিকে। আর জমিজমা, পশুর পাল, লাঙল ইত্যাদি দেওয়া হোক ওই সুন্দরী বেপরোয়া মেয়েটিকে। তাহলে এতে তিন মেয়ে তাদের স্বভাব অনুযায়ী ওই রকম সম্পত্তি পাওয়া পছন্দ করবে না। দেখতে ভালো নয় মাতাল মেয়েটি সাজপোশাক সব বিক্রি করে দেবে মদ কেনার জন্য। সুন্দরী মেয়েটি জমিজমা বিক্রি করবে সাজপোশাকের জন্য। আর হিসাবি খাটিয়ে মেয়েটি বড় বাড়ি, বাগান সব বিক্রি করে চাষবাসের জমি কিনবে।
অতএব, যে মেয়ে যা পেয়েছিল কিছুই রাখবে না। যার যার জিনিস বিক্রি করে নগদ টাকা জোগাড় করবে, আর তা থেকে তাদের মাকে তাঁর প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দেবে।
সারমর্ম:বুদ্ধিমানই সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
ভাষান্তর: কুশ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২০, ২০১১
Leave a Reply