হরতাল-সমর্থকের
সকাল আটটা
সকালে উঠেই মন ভালো হয়ে গেল। আহা! আজ হরতাল! কী মজা! অফিস নেই। অনেক দিন পর একটা ছুটি পাওয়া গেল। এ রকম যদি সব সময় হরতাল থাকত!
যা-ই হোক। পত্রিকাটা হাতে নিলাম। ‘সকাল-সন্ধ্যা হরতাল’ হেডলাইন দেখেই খুশি লাগল। কিন্তু কেবল খুশি হলে হবে? হবে না। কারণ, আজকে হরতাল। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার হরতাল। হরতালে একাত্মতা পোষণ করার জন্য আমি যতটা সম্ভব কপাল কুঁচকালাম। দেশের প্রয়োজনে দুশ্চিন্তা করতে হবে না? যা-ই হোক, মনে মনে হরতালের সফলতা কামনা করে টিভি রুমের দিকে গেলাম। ফাটাফাটি একটা মুভি দেখতে হবে আজ। আজ মহান মুভি দিবস।
দুপুর দুইটা
দেশের অবস্থা ভালো না। এটাকে কি গণতন্ত্র বলা যায়? সরকার হরতাল পালন করতে দিচ্ছে না। নেতাদের মেরে তক্তা বানিয়ে দিয়েছে পুলিশ। আমি আবার কপাল কুঁচকালাম। বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করলাম। হরতাল একটা গণতান্ত্রিক অধিকার। এটাতে বাধা দিলে কীভাবে হবে?
যা-ই হোক। পুরো সকাল মুভি দেখেছি। দারুণ কেটেছে।
এদিকে বউ বিরাট খেপে আছে আমার ওপর। আমি নাকি আইলসা। এসবের কোনো মানে হয়? আমাকে কথা পর্যন্ত বলতে দেয়নি! এটা কী রকম গণতান্ত্রিক আচরণ! ঘরে ঘরে আজ নিগৃহীত জনতা। দেশে হরতাল না হলে হবেটা কী? বউ মনে হয় আবার খেপেছে। যাই।
রাত ১০টা
আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে। হরতাল সফল করেছি। ওয়াও! দেশের মানুষ এই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। রাতের খবর দেখলাম। আমাদের নেতারাও অনেক খুশি। তাঁরা হরতাল সফল করার জন্য দেশের মানুষকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। আমাকেও ফোন করতে হবে কিছু। ডায়াল করলাম আমার দোস্তের নম্বর।
—দোস্ত! কী হরতাল করলাম দেখেছিস? একেবারে ফাটাইয়া দিছি।
হরতালবিরোধীর
সকাল আটটা
আজকে হরতাল। ভালো ব্যাপার। ছুটি পেলাম। কী আনন্দজনক ব্যাপার! কিন্তু হরতালটা সেভাবে মানতে পারছি না। বিরোধী দল দেশের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে হরতাল দিয়ে। এরা আসলে দেশের কোনো উন্নয়নই চায় না। হরতাল করে দেশ অচল করে দেওয়ার কোনো মানে হয়? পুরো দেশের মানুষ ঘরে বসে থাকবে। এভাবে দেশ চলে কীভাবে?
যা-ই হোক, আজ যেহেতু ফ্রি আছি, সেহেতু আমার প্রেমিকা মিলিকে সময় দেওয়া যেতে পারে। ও নিজেও আজ বাসায় আছে। অনেক কথা বলা যাবে আজ। ইয়াহু! আমি মিলির নম্বর ডায়াল করলাম।
দুপুর দুইটা
টিভিতে দেখলাম, পাত্তা পাচ্ছে না হরতালকারীরা। পাত্তা পাবেই বা কেন! দেশের মানুষ কি তাদের সঙ্গে আছে? নেই। দেশের সব মানুষ তো আছে সরকারের সঙ্গে।
যা-ই হোক, আজ মিলির সঙ্গে দেখা করব। খুব আনন্দ লাগছে। হরতালের এই ব্যাপারটা দারুণ লাগে। জ্যাম নেই। ইচ্ছামতো ঘোরা যায়। প্রেম করা যায়।
বিকেলে মিলি বের হবে। আমিও বের হব। কালো পাঞ্জাবি পরে যেতে হবে বলেছে।
কিন্তু পাঞ্জাবিটা যে কই রাখলাম!
রাত ১০টা
মিলির সঙ্গে দেখা করে অসম্ভব ভালো লাগছে। দুর্দান্ত কেটেছে আজকের দিনটা। অনেক রোমান্টিক। আমি এখনো রোমাঞ্চিত।
যা-ই হোক, কথা সেটা নয়; কথা হলো, বিরোধী দলের হরতাল দেশবাসী পুরো প্রত্যাখ্যান করেছে। হা হা হা। আমি আগেই জানতাম, হরতাল সফল হবে না।
কিছু ব্যাপারে খারাপ লাগছে আসলে। হরতালের কিছুটা প্রভাব তো পড়েই। এই দুঃখী দেশটাতে যেন আর হরতাল না হয়। হলে উন্নয়ন হবে কীভাবে?
যা-ই হোক। আজ ডেটিং করে অনেক টায়ার্ড। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোন দিলাম মিলিকে। মিলি আহ্লাদি গলায় বলল, আবার কবে দেখা হবে, জান?
আমি বললাম, চিন্তা কোরো না, জান। আরেকটা হরতাল হলেই দেখা করব। হরতালটা যে কবে হবে! দোয়া কোরো, তাড়াতাড়ি যাতে হয়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ১৩, ২০১১
Leave a Reply