বাংলা ছবির প্রায় একই রকম কাহিনি, সংলাপ ও দৃশ্যাবলি দেখতে দেখতে কি আপনি চরম বিরক্ত? আপনি কি চান এই একঘেয়েমি দূর হোক? কিন্তু কীভাবে দূর হবে, সেটা জানেন না। সমস্যা নেই। আমরা কিছু নমুনা উপস্থাপন করছি। দেখুন আপনার পছন্দ হয় কি না। নমুনা উপস্থাপনের দায়িত্বে আছেন ইকবাল খন্দকার-
তুই আমার বাবাকে খুন করেছিস।
প্রস্তাবিত নতুনত্ব
তুই আমার বাবাকে চিমটি মেরেছিস। (ময়লাওয়ালা নখ দিয়ে)
তুই আমার বাবাকে আংকেল বলে না ডেকে ‘জ্যাডা’ বলে ডেকেছিস।
তুই আমার বাবাকে তোর বাজখাঁই গলায় গান শুনিয়েছিস। তাও উচ্চাঙ্গসংগীত।
তুই আমার বাবার কাশি দেখে তাকে যক্ষ্মা রোগী বলেছিস। (অথচ নিয়মিত চিকিৎসায় যক্ষ্মা ভালো হয়)
তুই আমার বাবার সামনে চটি জুতা হেঁচড়িয়ে হেঁচড়িয়ে হেঁটেছিস।
মা, আমি পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি।
প্রস্তাবিত নতুনত্ব
মা, আমার রেজাল্ট আপাতত স্থগিত আছে।
মা, ফলাফলের তালিকায় আমার রোল নম্বর খুঁজে পাওয়া যায়নি। চিন্তা কোরো না, আবার অতিরিক্ত লোকবল নিয়ে খুঁজতে যাব।
মা, আমি যৌথভাবে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি। মানে আমার প্রাপ্ত নম্বর এবং ওসমানের নম্বর মিলে ফার্স্ট ক্লাস নম্বর হয়েছে।
মা, আমি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি…এমনটা আশা করা অনুচিত।
মা, আমি বেশ কয়েক নম্বর গ্রেস নিয়ে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি।
নায়কের গায়ে গুলি না লাগার দৃশ্য।
প্রস্তাবিত নতুনত্ব
নায়কের দিকে গুলিই ছোড়া হবে না। গুলতি দিয়ে ঢিল ছোড়া হতে পারে।
গায়ে লাগা তো দূরের কথা, নায়কের দিকে তাক করে গুলি ছুড়লে গুলিই ফুটবে না। বন্দুক নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
গুলির শব্দে নায়কের কানের পর্দায় এতই সমস্যা হবে যে সে মারামারি রেখে চলে যাবে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে।
নায়কের গায়ে গুলি লাগবে। তবে তার সঙ্গে চিকিৎসকও থাকবে। চিকিৎসকের চিকিৎসায় সে সুস্থ হয়ে বাকি মারামারি টুকু করবে।
মোবাইলে ভিলেনকে প্রস্তাব দেবে—এসো, আমরা গোলাগুলি না করে কিলাকিলি করি।
‘বাঁচাও’ বলে নায়িকার গগনবিদারী চিৎকার।
প্রস্তাবিত নতুনত্ব
বাঁচাও বলে নায়িকা চিৎকার দেবে ঠিকই, কিন্তু নায়কের কানে পৌঁছাবে না। কারণ, নায়ক তখন এফএম রেডিও শুনবে।
নায়িকা তার গলার টনসিল সমস্যার কারণে চিৎকারই দিতে পারবে না।
‘বাঁচাও’ বলা মানে তো ‘তুমি’ করে বলা। শুরুতেই তুমি করে বলা ঠিক হবে কি না এই নিয়ে নায়িকা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবে।
বাঁচাও বলে চিৎকার না দিয়ে নায়ককে একটা এসএমএস করে দেবে। এসএমএসে আর কয় টাকাই বা কাটে।
শুধু ‘বাঁচাও’ না বলে বলবে, ‘বাঁচাইলে বাঁচাও নইলে আমি ভিলেনের সঙ্গে সিনেমা দেখতে চলে গেলাম।’
সব শেষে পুলিশ আসার দৃশ্য।
প্রস্তাবিত নতুনত্ব
পুলিশ আসবে ঠিকই, তবে কাউকে গ্রেপ্তার না করে চা শিঙাড়া খেয়ে চলে যাবে।
পুলিশ আসবে, তবে হাজতে স্থান সংকুলানের কথা চিন্তা করে কাউকে ধরে নিয়ে যাবে না।
তাড়াতাড়ি আসার কারণে ইউনিফর্ম পরার সুযোগ পাবে না। ফলে পুলিশ এলেও বোঝা যাবে না যে তারা পুলিশ।
হঠাৎ অন্য জায়গায় ডিউটি পড়ে যাওয়ায় এখানে পুলিশ আসবে না। তবে ফোন করে বলবে, যাঁরা যাঁরা মারামারি করেছেন, তাঁরা থানায় চলে আসেন।
পরিচালক পুলিশকে বুঝতে দেবে না ছবির শেষ দৃশ্য কোনটি। অতএব পুলিশেরও আসা হবে না।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০৬, ২০১১
Leave a Reply