‘কে যাচ্ছেন? দাঁড়ান!’ ‘আমি। কেন, কী হয়েছে?’
‘কাস্টমস চেকিং! কী নিয়ে যাচ্ছেন সঙ্গে?’
‘কিছুই না। কিন্তু কাস্টমস চেকিং মানে? আমি তো বাসায় ফিরছি অফিস থেকে!’
‘আমাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাবেন না। মনে রাখবেন, দায়িত্ব পালনে বাধা পড়লে আমরা সতর্কতা ছাড়াই গুলি করতে পারি।’
‘বুঝেছি। এই চুপ করলাম। কিন্তু মাফ করবেন, এই রাস্তায় তো আগে কখনো কাস্টমস চেকিংয়ের ব্যবস্থা ছিল না!’
‘ছিল না, এখন থেকে থাকবে। এখন বলুন, আপনার ব্যাগে কী?’
‘কিছুই নেই। মানে, সসেজ আছে। ৩৫০ গ্রাম।’
‘দেখান। সার্টিফিকেট আছে?’
‘কিসের সার্টিফিকেট?’
‘সসেজ তৈরির সময় যে-জন্তুর মাংস ব্যবহূত হয়েছে, সেটি বিপজ্জনক কোনো সংক্রামক রোগে ভুগছিল না, এ বিষয়ে।’
‘না, তেমন সার্টিফিকেট আমার নেই।’
‘খুবই খারাপ কথা। আপনার সসেজ তাহলে জব্দ করতে বাধ্য হচ্ছি। আর কী আছে আপনার?’
‘রুটি।’
‘রুটিও জব্দ করা হচ্ছে। সসেজ ছাড়া রুটি দিয়ে করবেনটা কী? যুক্তি ঠিক আছে না?’
‘জানি না।’
‘আমরা জানি। বৈদেশিক মুদ্রা আছে?’
‘কোত্থেকে? এই নিন, নিজেই দেখুন, হতচ্ছাড়া রুবল ছাড়া আর কিছুই নেই।’
‘রুবল নিয়ে ঘুরছেন কেন? নিশ্চয়ই এই রুবল দিয়ে ডলার বা জার্মান মার্ক কিনে পরে বেআইনিভাবে বিদেশে পাচার করে দেবেন! রুবলও জব্দ করছি তাই।’
‘কিন্তু…।’
‘কোনো কিন্তু নয়। আপনার গায়ের জ্যাকেটটি কোন দেশি?’
‘জানি না।’
‘দাঁড়ান, দেখছি… হুমম, চায়নিজ। আমাদের দুর্দশাগ্রস্ত অর্থনীতিকে আরও জরাজীর্ণ বানাচ্ছেন কেন?’
‘আমি?’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আপনি। বোকা হওয়ার ভান করবেন না। সেটার প্রয়োজন নেই। আপনি কি বুঝতে পারেন না, বিদেশি জিনিস কিনে আপনি আমাদের দেশের হাজার হাজার লোককে বেকার বানিয়ে রাখছেন?’
‘ওহ! বুঝতে পেরেছি। খুলব?’
‘অবশ্যই!’
‘আন্ডারওয়্যারও?’
‘আন্ডারওয়্যারও মানে?’
‘ওটাও তো বিদেশি। বিজাতীয় ভাষায় ওতে লেখা আছে কী সব!’
‘না, না। ওটা খুলতে হবে না। আমরা কি মানুষ নই, নাকি! এখন যেতে পারেন। আমরা আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি একটি শর্তে: এই ঘটনার কথা কখনো কাউকে বলবেন না। হাজার হোক, একটি বেআইনি কাজ তো আমরা করে ফেললাম—আপনার আন্ডারওয়্যারটা তো বিদেশি!’
‘আমাকে আপনারা কী ভেবেছেন? আমি গবেট নাকি! আমি বুঝি না, ভেবেছেন? একদম চুপ থাকব। মাছের মতো।’
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ৩০, ২০১১
Leave a Reply