টান টান উত্তেজনা ক্লাসে। উবু হয়ে বসে রোল-কলের খাতা খুলে সেদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন ইজাবেলা মিখাইলভনা। তারপর একসময় বললেন, ‘বারসুকোভ।’
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সবাই তাদের পাঠ্যপুস্তক বন্ধ করল। বারসুকোভ উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেল ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে। তারপর কেন জানি বলল, ‘ইজাবেলা মিখাইলভনা, খুব সুন্দর লাগছে আজ আপনাকে।’
ইজাবেলা মিখাইলভনা চশমা খুলে তাকালেন বারসুকোভের দিকে।
‘এবার শুরু করো, বারসুকোভ।’
নাকের শিকনি টেনে বারসুকোভ শুরু করল, ‘আপনার চুলের বাহারটিও দারুণ। এক্কেবারে নিখুঁত।’
উঠে দাঁড়িয়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালেন ইজাবেলা মিখাইলভনা।
‘তুমি কি পড়া করে আসোনি আজ?’
‘একদম ঠিক ধরেছেন!’ প্রবল উৎসাহ নিয়ে বলতে শুরু করল বারসুকোভ। ‘আপনার কাছে কেউ কিছু লুকোবে, সে ক্ষমতা আছে নাকি কারোর! এত দিনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বৃথা যেতে তো পারে না!’
মুচকি হেসে ইজাবেলা মিখাইলভনা বললেন, ‘বারসুকোভ! বারসুকোভ! শোনো, ম্যাপে দেখাও দেখি আমাদের শহরটা কোথায়?’
হাতে ধরা ছড়ি দিয়ে অনির্দিষ্ট এক জায়গা নির্দেশ করল বারসুকোভ।
‘নিজের ডেস্কে গিয়ে বসো।’ বললেন ইজাবেলা মিখাইলভনা। ‘তিন*…’
বিরতির সময় বারসুকোভ ইন্টারভিউ দিচ্ছিল সহপাঠীদের…
‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই ডাইনির চোখে ধুলো দিতে হবে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে…’
ঠিক সেই সময়ে ইজাবেলা মিখাইলভনা হেঁটে যাচ্ছিলেন পাশ দিয়ে। সেদিকে তাকিয়ে বারসুকোভ বলল অবজ্ঞার সুরে, ‘ব্যাপার না! এই বোকা মহিলাটা একেবারেই ঠসা। দুই ধাপ দূরের কথাও শুনতে পায় না।’
থমকে দাঁড়িয়ে ইজাবেলা মিখাইলভনা এমনভাবে তাকালেন বারসুকোভের দিকে যে বারসুকোভ জেনে গেল, এই বোকা মহিলা দুই ধাপের চেয়ে বেশি দূরের কথাও শুনতে পান।
ঠিক পরদিনই ইজাবেলা মিখাইলভনা আবার বারসুকোভকে ডাকলেন ব্ল্যাকবোর্ডে।
ভয়ে সাদা হয়ে গেল বারসুকোভ। ভাঙা ভাঙা গলায় বলল, ‘আপনি তো গতকালই আমাকে ডেকেছিলেন!’
‘আমার আবার ইচ্ছে করছে।’ কপাল কুঁচকে বললেন ইজাবেলা মিখাইলভনা।
‘আপনার হাসি তো রীতিমতো চোখ ধাঁধানো!’ কাঁপা কাঁপা গলায় কথাটা বলেই বারসুকোভ নীরব হলো।
‘আর কী?’ শুষ্ক কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন ইজাবেলা মিখাইলভনা।
‘আপনার গলার স্বর খুব মিষ্টি।’ কোনোমতে বলতে পারল বারসুকোভ।
‘হুম্,’ ইজাবেলা মিখাইলভনা বললেন। ‘আজও পড়া করে আসোনি।’
‘আপনি তো দেখছি সবই বোঝেন! সবই জানেন!’ বারসুকোভ বলতে শুরু করল অলস স্বরে। ‘কেন যে আপনি স্কুলে চাকরি করছেন! আমার মতো গবেটদের পেছনে ক্ষয় করছেন নিজের শরীর-স্বাস্থ্য। সমুদ্রতীরে বিশ্রাম নিতে যাওয়া উচিত আপনার। উচিত কবিতা লেখা, উপযুক্ত জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া…।’
ইজাবেলা মিখাইলভনা মাথা নিচু করে চিন্তামগ্নভাবে পেনসিল দিয়ে এলোমেলো আঁকছিলেন কাগজের ওপরে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচু গলায় তিনি বললেন, ‘নিজের ডেস্কে গিয়ে বসো, বারসুকোভ। তিন।’
* রুশ শিক্ষাব্যবস্থায় প্রচলিত নম্বরদানপদ্ধতি অনুযায়ী: ৫ – অসাধারণ, ৪ – ভালো, ৩ – মোটামুটি, ২ – খারাপ…
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ০৯, ২০১১
Leave a Reply