Private
Uttarayan
Shantiniketan
কল্যাণীয়াসু,
কাল রাত্রি সাড়ে তিনটের সময় হঠাৎ চারবার হাঁচতেই আলু* ছুটে এল—বলেল ভালো ঠেকচে না। আমি বললুম জহরলালকে তার করা চাই তার সেক্রেটারীকে যেন লুধিয়ানা একস্প্রেসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, ইনটারভিয়ুর দরকার—কেন না এখনি আরো চারটে হাঁচি আস্ব আস্ব করচে। ফজলুল হক সাহেবের কানে কথাটা গিয়েছে তিনি বললেন এরকম হাঁচি কমুন্যালিষ্টিক না হয়ে যায় না—এটা হিন্দুমহা-সভার ফ্যাচাং, কৌন্সিলে তিনি এর একটা হেস্ত নেস্ত না করে ছাড়বেন না, মহাগোল বেঁধে গেছে। সত্যেন্দ্র মিত্র বুক ফুলিয়ে বলচেন, সাতাশজন গুণ্ডা ভাড়া করে নস্যি লাগিয়ে হাঁচাবেন—ফী হাঁচির মাঝখানে ধ্বনিত হবে বন্দেমাতরম গান। চেম্বরলেন cable করেছেন এখনি appeasement-এর দরকার—কিন্তু ছাতা** খুঁজে পাচ্ছেন না। সোবিয়েট গবর্মেণ্ট বলে পাঠিয়েছেন হাঁচিতে তাদের কোনো আপত্তি নেই যদি সমস্ত জনসাধারণের মধ্যে এই হাঁচি ঠিক সমানভাবে নাকে নাকে ভাগ করে দেওয়া হয়। টোরি গবর্মেণ্টের ঘোর আপত্তি, হাঁচিই হোক কাশিই হোক তারা মনোপলির পক্ষে, মুখে বলচে ইন্টরভেনসন করে নস্যি রপ্তানি বন্ধ করে দেবে—সত্য রক্ষা করেছে, পাঠিয়েছে ধানি লঙ্কার গুঁড়ো ১৭০০ বস্তা। জহরলাল টেলিগ্রাম করেছেন—কবির মগজ থেকে কনেগ্রসি হাঁচির উদ্ভাবন হোক—সে হাঁচি বাঁ নাক দিয়ে বামপন্থীদের লাগাক ফাঁচ ফাঁচ শব্দে তাড়া। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছি, সুর সুর করচে নাসারন্ধ্র আর গান গাচ্চি।
সখিরে ধারা বহে সারাদিন মান—
নাকের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো
আকুল করিয়া দিল প্রাণ
নাকের ভিতরে official secret রক্ষা করবার bill পাশের প্রস্তাব উঠেছে—কিন্তু রাখতে পারব না।
ডেরাডুন মেলে ধুর্জ্জটি এসে পৌঁচেছেন, বলচেন গুরুদেব, তোমার বিশ্বকম্পায়নি হাঁচি লাগাও খুব কষে রিপোর্ট করে দিই। আজ এই পর্য্যন্ত—কিন্তু গোপনীয়—
৩/৭/৩৯ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
* আলুর আসল নামটি ছিল বেশ খটমট। তার ভাইয়ের নাম পটল হওয়ায় রবীন্দ্রনাথ তাকে আলু বলে ডাকতেন।
**Chamberlain ব্রিটিশ প্রাইম মিনিস্টার সম্বন্ধে রটনা তাঁর হাতে সব সময় ছাতা থাকে।
সূত্র: স্বর্গের কাছাকাছি, মৈত্রেয়ী দেবী।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২৫, ২০১১
Leave a Reply