আমি মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হই, কাজী নজরুল ইসলামের মতো এমন একজন বিদ্রোহী টাইপ মানুষ কীভাবে সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠায় উৎসাহিত করার জন্য কবিতা লিখতে পারেন! এবং নিজেও ঘুম থেকে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারেন। আমি হব সকাল বেলার পাখি, সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি। এটা হলো কোনো কিছু? আজব ব্যাপার না? আমি নিশ্চিত, এই কবিতা যখন তিনি লেখেন তখন তিনি নিজের ভেতর ছিলেন না, ফুলের জলসায় তিনি ছিলেন নীরব কবি। তার (ত-এর ওপর চন্দ্রবিন্দু হবে) কি তখন মতিভ্রম ঘটেছিল?
কাজী সাহেবকে আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু চিনি, তাতে উনার মতো বান্দার সকালের ঘুম হারাম করে পাখিটাখি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করার কথা না। আমি দিব্যচোখে দেখতে পাই, তিনি সারা রাত হইহুল্লোড় করে ভোরে ঘুমাতে গেছেন। দুপুর বারোটা-একটার দিকে উঠে একটা সিগারেট ধরাচ্ছেন, এর ভেতর কেউ একজন কড়া লিকারের চা এনে দিয়েছে। তিনি চায়ে তিনটা চুমুক দিয়েই ঢুকলেন বাথরুমে। এক-দেড় ঘণ্টা পর বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলেন, মোবাইল স্ক্রিনে তিনটা মিসকল। একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় বলে কে মিসকল দিয়েছে সেটা আমি বলছি না। কিন্তু তিনি একটু আড়ালে গিয়ে ফোন ব্যাক করলেন। আমি শুধু প্রথম কয়েকটা শব্দ শুনতে পেলাম, ও আমার জান পাখি…।
তাহলে কি তিনি পাখি নামের কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন? যে পাখি প্রতিদিন পুজোর ফুল কুড়াতে তাঁর বাগানে আসত? আর তিনি তাকে দেখতে সকালে ঘুম থেকে ওঠার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন নাকি তিনি পাখি হতে চেয়েছিলেন? লিখতে চেয়েছিলেন, আমি হব সকাল বেলার পাখির।
Ashif Entaz Rabi শিক্ষা বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ক্লাস ওয়ানের জন্য তারা বাংলা বই বের করবে। ওই বইয়ে বিখ্যাত লেখকদের ছড়া, কবিতা ইত্যাদি থাকবে। রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা মনোনয়ন পেল—আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে। কবিতা বাবদ রবীন্দ্রনাথ ২০ টাকা বিল পেলেন। নজরুলেরও টাকা দরকার। তিনি বিদ্রোহী কবিতা জমা দিলেন। শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি বললেন, আপনার কবিতা পড়ে পোলাপান বিদ্রোহী হয়ে উঠবে। আমরা বিদ্রোহী শিশু চাই না। আমরা চাই পোষ মানানো যায় এমন ছেলেপেলে। তিনি আবার কলম নিয়ে বসলেন। লিখলেন, আমি হব সকাল বেলার মোরগ। কিন্তু পরের লাইনে গিয়ে তিনি আর ছন্দ মেলাতে পারেন না। ছন্দ মেলানোর জন্য তিনি কলম কামড়ে আবার লিখলেন, আমি হব সকাল বেলার কাক/সবার আগে কুসুমবাগে দেব আমি ডাক। কবিতা লিখে তিনি চলে গেলেন এক পাখি বিশেষজ্ঞের বাসায়। পাখি বিশেষজ্ঞ কাকের জায়গায় লিখলেন পাখি। ছড়াটা দাঁড়াল, আমি হব সকাল বেলার পাখি, সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি। এই হচ্ছে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
মাসুদুল হক কবিতার মেইন স্ক্রিপ্টে আসলে ছিল ‘আমি হব রাতের বেলার পাখি’। সেই সময় কাজী সাহেব দৈনিক প্রথম আঁধারে নিয়মিত লিখতেন। এই পত্রিকার এক প্রুফ রিডারের ছেলে ছিল কবির মহাভক্ত। সেই ছেলে এমনিতেই অফ-পিক আওয়ার পুরোটা ফিসফিস করে ফোনে কথা বলে কাটিয়ে শেষ রাতে ঘুমাতে যায়, তার ওপর যদি পত্রিকায় পরদিন এমন একটা ইন্সপায়ারিং কবিতা দেখে, তবে স্কুল পালিয়ে নজরুল না হলেও, রাত জেগে কবে না নজরুল টাইপ হয়ে যায় সেই সীমাহীন আশঙ্কায় তিনি সঙ্গে সঙ্গে কবিতার ওপর কলম চালানো শুরু করলেন। পরদিন দুপুরে পেপার হাতে নিয়ে কবি দেখেন ‘রাত’ ‘সকাল’ হয়ে গেছে।
Liya Ferdous আসল ঘটনা হলো, কাজী সাহেব সকাল বেলা ফুল কুড়াতে আসা পাখির প্রেমে পড়ে লিখলেন—আমি হব সকাল বেলার পাখির বর/দুজন মিলে বাঁধব সুখের একখান ঘর। এরই মধ্যে এল পাখির জন্মদিন। কাজী সাহেবের হাত একেবারে খালি, গিফট তো দিতে হবে। তিনি শুনলেন, শিক্ষা বোর্ড ক্লাস ওয়ানের জন্য নতুন কবিতা চেয়েছে। হাতের কাছে আর কোনো কবিতা না থাকায় তিনি এটাই পাঠিয়ে দেন। পরে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা একটু সম্পাদনা করে কবিতাটিকে শিশু-উপযোগীকরে তোলেন।
Sobak Pakhi কাজী সাহেব আসলে আমাকে (সবাক পাখি) দেখে সুতীব্র অনুপ্রেরণায় মাথায় মুহুর্মুহু চাপ অনুভব করেছিলেন। বস্তুত তিনি চেয়েছিলেন আমার মতো বা অনেকটাই আমার মতো কিছু একটা হতে। সে চরম চাওয়ার পথ ধরে তিনি পরমভাবে উচ্চারণ করেছিলেন—আমি হব সবাক পাখি… কিন্তু পরবর্তী সময়ে অনেকেই সবাককে সকাল বেলা বা সবা কেলা—এসব বলে গুলিয়ে ফেলেছেন। অবশ্য সত্য কখনো চাপা থাকে না।
GM Tanim সকাল বেলার পাখি কবি ছোটবেলায় হতে চেয়েছিলেন। বড় হওয়ার পর অন্য সবার মতো তিনিও বেলাইনে চলে যান!
Local Talk সত্যি কথা বলতে কি, এই রহস্য উদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। বিরোধী দলও এই বিষয়ে সহায়তা দিতে রাজি নয়। তারা বলছে, সরকার রহস্য উদ্ধারে আন্তরিক নয়। অজ্ঞাত কারণে মুখে কুলুপ এঁটেছে সুশীল সমাজও। শেষমেশ মার্কিন দাতা সংস্থার অর্থায়নে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সোসাইটির তত্ত্বাবধানে ৩৩ জন কবি-গবেষক (+প্রাবন্ধিক) পরিচালিত এক গবেষণা থেকে জানা যায়, কবি সকালে উঠতেন মূলত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (রূপক অর্থে কুসুম বাগ) সকাল সকাল পৌঁছানোর উদ্দেশ্য নিয়ে। কবি ছিলেন সেখানকার নিয়মিত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। ভুতুড়ে স্পিনিং মিলসহ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার কিনে দেখেছিলেন লাভের মুখও। এ ছাড়া একাধিক বোনাস শেয়ার পাওয়ার পর কবির উচ্ছ্বাসের পরিচয় পাওয়া যায় যথাক্রমে তার একটি চতুর্দশপদী কবিতা ও দুটি দ্বিপদী ছড়ায়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ১৮, ২০১১
Leave a Reply