হস্তরেখাবিদ্যা চর্চা করল পেত্রোভ বহুদিন ধরে। তারপর যখন পুরো বিদ্যে আয়ত্তে এসে গেল তার, সে জেনে গেল, সুখের জীবন তার বাকি আর নেই-ই প্রায়। দুটো বছর শুধু। তার পরে শুরু হবে দীর্ঘ ব্যাধি এবং শেষে মৃত্যু।
ভোগবিলাসী, জুয়াড়ি, নারীলিপ্সু, মোদ্দা কথা—ভালো মানুষ পেত্রোভ সিদ্ধান্ত নিল, নিয়তির আঘাতের উত্তরে সেও আঘাত হানবে। দীর্ঘ সময় ধরে সে কী সব আঁকিবুঁকি করল, লাটে উঠল তাস, নারী, মদ। হয়ে উঠল সে তিরিক্ষি-মেজাজি। শুকিয়েও গেল তার শরীর। সম্ভাব্য সবকিছু বেচে দিয়ে জড়িয়ে পড়ল ঋণে এবং মাস খানেক বাদে শেষ হলো তার প্রস্তুতি।
সর্বশ্রেষ্ঠ প্লাস্টিক সার্জন, যার শরণ নিল পেত্রোভ, শুরুতে প্রত্যাখ্যান করল তাকে। তবে তোড়া তোড়া সবুজ নোট দেখে সিদ্ধান্ত নিল পেত্রোভের অনুকূলে। দুই সপ্তাহ পরে ক্লিনিক থেকে ছাড়া পেল পেত্রোভ। তার হাতে তখন আদর্শ আয়ুরেখা। কিছুদিন যেতে না-যেতেই তার জীবনে আসতে শুরু করল নানান পরিবর্তন, যেসব সে সযত্নে আঁকিয়ে নিয়েছে নিজের করতলে।
একদিন এক পরিচিত জনের আমন্ত্রণে পেত্রোভ গেল এক অনুষ্ঠানে। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হলো এক আমেরিকান মেয়ে-সাংবাদিকের। দুই মাস বাদে একেবারে আমেরিকায় বিবাহ অনুষ্ঠান উদ্যাপন করল তারা। বিয়ের এক মাসের মাথায় মারা গেল তার স্ত্রীর কাকি, যার অস্তিত্বের কথা ঘুণাক্ষরেও জানত না তার স্ত্রী এবং তাই উত্তরাধিকার হিসেবে তার মাথায় এসে পড়া দু শ মিলিয়ন ডলারকে প্রীতিকর চমক বলা যেতেই পারে।
এই টাকার অর্ধেকটা স্ত্রী ব্যাংকে রাখল পেত্রোভের নামে (প্রেমে পড়লে মেয়েরা কত বেকুবি কাজ যে করে!)।
আরও এক বছর পরে, প্রেম শুকিয়ে এলে, তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে এক পত্রিকাগোষ্ঠীর বিত্ত-বৈভবশালী মালিকের কাছে চলে যাওয়ার সময় কিছুটা অনুতপ্ত বোধ করেছিল বৈকি!
পেত্রোভ, যার সম্পর্কে লেখক আগেই জানিয়েছে, ছিল পুরুষালি চরিত্রের। আর তাই স্ত্রীর ছলনাময়ী আচরণে মুষড়ে তো পড়লই না, বরং ভূমধ্যসাগরের পাড়ে নতুন এক বাড়ি ও একগাদা বিনোদনকেন্দ্র কিনে ফেলল। তারপর সেখানে অহংকৃত নিঃসঙ্গতায় (বিনোদনকেন্দ্রগুলোর অগণ্য মেয়েকে হিসাবে না ধরলে) উপভোগ করতে থাকল নিয়তির উপর্যুপরি আঘাত।
এভাবে চলতে থাকল দীর্ঘদিন। তার এক শ কুড়ি বছর বয়স পর্যন্ত। এক শ একুশ বছর বয়সে সে মারা গেল এক তরুণীর সঙ্গে আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায়…
চল্লিশ দিন পরে ঈশ্বরের বিচারের মুখোমুখি হয়ে পেত্রোভ জানল, তার ওপরে নজরদারি করার দায়িত্বে ছিল যে দেবদূত, তার চাকরি গেছে। আর বিচারে পেত্রোভকে দেওয়া হলো চার বছরের নরকবাস। ডকুমেন্ট জাল করার দায়ে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ১৮, ২০১১
Leave a Reply