পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিল এক জাদুকর। হঠাৎ তার চোখে পড়ল, এক যুবতী কাঁদছে, এতই অঝোরধারায় যে তার সামনে খুদে অশ্রু-ঝিল তৈরি হয়ে গেছে।
‘আপনাকে কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি?’ প্রশ্ন করল জাদুকর।
‘আমাকে সাহায্য করতে পারে শুধু অলৌকিক কোনো ঘটনা,’ মেয়েটি উত্তর দিল।
‘অলৌকিক ঘটনা? এ তো আমার আওতায়!’ জাদুকর বলল। ‘আমি জাদুকর। আপনার তিনটি ইচ্ছা আমি পূরণ করতে পারব। বলুন এক-এক করে।’
‘আমি রূপবতী নই। কিন্তু জানেন, এত ইচ্ছে করে, যাতে পুরুষেরা আমাকে দেখলেই পাগল হয়ে যায়!’
জাদুকর তার একটা দাড়ি ছিঁড়ে নিয়ে মন্ত্র পড়তে শুরু করল, ‘ছু-মন্তর-ছু…।’ অমনি পূরণ হয়ে গেল মেয়েটির প্রথম ইচ্ছে।
মেয়েটি অশ্রু-ঝিলের দিকে তাকাল এবং নিশ্চিত হলো, সে পরিণত হয়েছে অপরূপায়। আনন্দে তার উৎফুল্ল হয়ে ওঠার কথা, অথচ সে আবার কেঁদে ফেলল।
‘শুধু সৌন্দর্য দিয়ে কী লাভটা হবে! আমার অর্থসম্পদ নেই, নেই নিজের বাড়ি…। আমাকে কে পছন্দ করবে!’
‘ছু-মন্তর-ছু!’ অমনি শহরের একেবারে মধ্যিখানে পাঁচ রুমের এক ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে গেল মেয়েটি। সমস্ত দেয়ালে আয়না সাঁটা, ইউরোপীয় আসবাবপত্র, দামি মোবাইল ফোন, অডিও-ভিডিও সেট…। এ ছাড়া টেবিলের ওপর পিরামিডের আদলে টাকার স্তূপ, গাড়ির চাবি। বিশাল সম্পদের অধিকারী হয়ে তার আনন্দে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কথা, অথচ আরও জোরদার হলো তার কান্না।
‘এখন এত সম্পদ নিয়ে ভদ্রগোছের পুরুষ কোথায় খুঁজে পাব? চারপাশে শুধু চোর-বাটপার আর অ্যালকোহলিক। জ্যামের ওপর বসা মাছির মতো তারা ছুটে আসবে এই সম্পদের টানে। তারপর সব লুটেপুটে খেয়ে কেটে পড়বে।’
‘তোমার আর একটা ইচ্ছে বাকি আছে,’ জাদুকর বলল। কাকে বিয়ে করতে চাও: জাঁ ক্লদ ভানড্যাম, মাইকেল জ্যাকসন, দমিত্রি খারাতিয়ান?’
‘তোমাকে বিয়ে করতে চাই!’ বলল মেয়েটি। ‘এমন সুযোগ আর কখনো আসবে না: স্বামী—জাদুকর!’
তৃতীয় ইচ্ছে পূরণ করে সম্পূর্ণ কাহিল জাদুকর ঢলে পড়ল ডিভানের ওপর। মেয়েটি তার পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে, বলল, ‘আমাকে চুমু খাও।’
‘আমি দুঃখিত, কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, এটা কিন্তু তোমার চার নম্বর ইচ্ছে! আমার ক্ষমতা সীমিত, প্রতি পাঁচ বছরে তিনটি ইচ্ছে পূরণ করতে পারি।’
‘আর নিজের প্রিয় স্ত্রীর জন্য?’
‘স্ত্রীর জন্য প্রতি পাঁচ বছরে একটি। আমি তো সর্বক্ষমতাবান নই।’
‘শুরুতেই সেটা বলোনি কেন?’ চিৎকার করে উঠল মেয়েটি। তারপর জাদুকরের দাড়ি ধরে এমন হ্যাঁচকা টান দিল যে জাদুকর তার জাদুকরি ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল চিরতরে।
তাই জাদুকর ভায়াদের উদ্দেশে বলি, মনে রাখবেন, মেয়েদের সব ইচ্ছে পূরণ করতে না পারলে ও পথে পা না বাড়ানোই শ্রেয়। মেয়েরা ভাগে-ভাগে নিতে পছন্দ করে না। তারা চায় পুরোটা এবং একসঙ্গে। ছু-মন্তর-ছু!
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ১১, ২০১১
Leave a Reply