এক যে ছিল পান্তাবুড়ি, সে পান্তাভাত খেতে বড্ড ভালোবাসত। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে সে ফ্রিজে ভাত রেখে দিত, সকালে পানি ঢেলে খাবে এ জন্য। কিন্তু এক চোর এসে রোজ ফ্রিজ খুলে পান্তাবুড়ির পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই বুড়ি লাঠি ভর দিয়ে পুলিশের কাছে নালিশ করতে চলল।
পান্তাবুড়ি ইলেকট্রিকের দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। একটা ইন্ডাকশন কয়েল তাকে দেখতে পেয়ে বলল, ‘পান্তাবুড়ি, কোথায় যাচ্ছ?’
পান্তাবুড়ি বলল, ‘চোর আমার পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই নিকটস্থ থানায় নালিশ করতে যাচ্ছি!’
ইন্ডাকশন কয়েল বলল, ‘ফিরে যাবার সময় আমাকে নিয়ে যেয়ো, তোমার ভালো হবে।’
পান্তাবুড়ি বলল, ‘আচ্ছা।’
তারপর পান্তাবুড়ি একটা ক্র্যাশ করা স্পেসশিপের সামনে এসে পড়ল। দেখতে পেল একটা এলিয়েন একটা কাচের ঘরে আটকে আছে, বের হতে পারছে না। পান্তাবুড়ি লাঠির বাড়ি দিয়ে কাচ ভেঙে ফেলল। এলিয়েন তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘পান্তাবুড়ি, কোথায় যাচ্ছ?’
পান্তাবুড়ি বলল, ‘চোর আমার পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই থানায় নালিশ করতে যাচ্ছি।’
এলিয়েন বলল, ‘ফিরে যাবার সময় দেখা করে যেয়ো, তোমার ভালো হবে।’
পান্তাবুড়ি বলল, ‘আচ্ছা।’
তারপর পান্তাবুড়ি পথের ধারে একটা ইলেকট্রনিকসের দোকান দেখতে পেল। দোকান থেকে একটা রিমোট কনট্রোলার বলল, ‘পান্তাবুড়ি, কোথায় যাচ্ছ?’
পান্তাবুড়ি বলল, ‘চোর আমার পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই থানায় নালিশ করতে যাচ্ছি।’
রিমোট বলল, ‘ফিরে যাবার সময় আমাকে নিয়ে যেয়ো, তোমার ভালো হবে।’
পান্তাবুড়ি বলল, ‘আচ্ছা।’
তারপর খানিক দূরে গিয়ে পান্তাবুড়ি দেখল, পথের ধারে একখানা ইলেকট্রিক রেজর পড়ে রয়েছে।
রেজর বলল, ‘পান্তাবুড়ি, কোথায় যাচ্ছ?’
পান্তাবুড়ি বলল, ‘চোর আমার পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই থানায় নালিশ করতে যাচ্ছি।’
রেজর বলল, ‘ফিরে যাবার সময় আমাকে সঙ্গে নিয়ো। তোমার ভালো হবে।’
পান্তাবুড়ি বলল, ‘আচ্ছা।’
তারপর পান্তাবুড়ি থানায় গিয়ে দেখল, দারোগা নেই। ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসী ধরতে গেছে। কাজেই সে আর নালিশ করতে পারল না। কনস্টেবল তাকে বলল, ‘একটা জিডি করে যান। তবে লাখখানেক টাকা ঘুষ দিতে পারলে…চোর ধরা তো ধরা, দরকার হলে একেবারে হাঁটুতে গুলি করে দেওয়া যাবে বা ক্রসফায়ারে দেওয়া যাবে।’ পান্তাবুড়ি এই আইডিয়া পছন্দ করল না। সে বাড়ি ফিরে এল।
বাড়ি ফেরার সময় তার ইন্ডাকশন কয়েল, ইলেকট্রিক রেজর আর রিমোট কনট্রোলারের কথা মনে হলো। সে তাদের সবাইকে তার থলেয় করে নিয়ে এল আর এলিয়েনের কাছ থেকে একটা ইএমপি জেনারেটর নিয়ে এল।
পান্তাবুড়ি যখন বাড়ির আঙিনায় এসেছে, তখন রেজর তাকে বলল, ‘আমাকে গেটের সামনে রেখে দাও।’ তাই বুড়ি রেজরটাকে গেটের সামনে রেখে দিল।
তারপর যখন পান্তাবুড়ি ঘরে উঠতে যাচ্ছে, তখন রিমোট কনট্রোলার বলল, ‘আমাকে সোফার ওপর রেখে দাও।’
তাই বুড়ি রিমোট কনট্রোলারটা সোফার ওপর রেখে দিল।
তখন ইএমপি জেনারেটর বলল, ‘আমাকে জানালার পাশে রাখো।’ বুড়ি তা-ই করল। শেষে ইন্ডাকশন কয়েল বলল, ‘আমাকে তোমার ফ্রিজের হাতলে লাগিয়ে রাখো।’
বুড়ি তা-ই করল।
তারপর রাত হলে বুড়ি রান্না-খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে রইল।
ঢের রাতে চোর এসেছে। সে তো আর জানে না, সেদিন বুড়ি কী ফন্দি করেছে। জানালা দিয়ে ঢোকার সময় তার নাইট ভিশন গগলস পরে নিল, কিন্তু ইএমপির ম্যাগনেটিক পালসে সেটা নষ্ট হয়ে গেল। চোর তো আর কিছু দেখে না চোখে। তবে পান্তা চুরি করতে করতে তার মুখস্থ কোথায় ফ্রিজ। হাতড়ে হাতড়ে ফ্রিজে যেই হাত দিয়েছে, কয়েলের তারে হাত আটকে হাই ভোল্টেজ কারেন্টে শক খেল। আর শক খেয়ে পড়বি তো পড় ছিটকে গিয়ে সোফার ওপরে। সোফার ওপরে ছিল রিমোট, সাধারণ রিমোট তো নয়, সেটার কারণে শুধু বুড়ির নয়, আশপাশের সব বাসার টিভি চালু হয়ে গেল উচ্চস্বরে। পুরো এলাকায় বিশাল চিৎকার, ‘মার ঘুরিয়ে! মার ঘুরিয়ে!’ রাগে এলাকাবাসী বের হয়ে এল লাঠিসোঁটা হাতে। চোর তখন ব্যথা আর ভয়ে পাগলের মতো হয়ে যেই ঘর থেকে ছুটে বেরোবে, অমনি তার পা পড়ে রেজরে। দাড়ি কাটার রেজার চালু হয়ে তার আঙুল গেল মোরব্বা হয়ে। চিৎকার করে উঠল চোর, ‘ও মা গো!’ তা শুনে পাড়ার লোক সেই বাড়িতে ছুটে এসে বলল, ‘এই বেটা চোর! ধর বেটাকে! মার বেটাকে!’
কিছুক্ষণ সিরিয়াস ধোলাইয়ের পর উপস্থিত জনতা নিজেরাই চোরকে দিয়ে এল থানায়। বেচারা চোর দারুণ শিক্ষা পেল।
ডিজিটাল যুগে চোর ধরতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রগুলো ব্যবহার করা অনেক উপকারের তা তো দেখলেই। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করো, যন্ত্রপাতি কীভাবে মানুষের মতো কথা বলে, সে গল্প না হয় আরেক দিন বলব।
[লোকগল্প অনুসারে]
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ১১, ২০১১
Leave a Reply