স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছে। আমরা ১০-১২ জন ছিলাম ২০০ মিটার রিলে দৌড়ের প্রতিযোগী। আমরা সবাই দৌড় শুরু করার জন্য কান খাড়া করে সংকেতের অপেক্ষা করছি। আমি ছিলাম এই ইভেন্টের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। তাই স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের তুলনায় আমি একটু বেশিই উত্তেজিত ছিলাম। বাঁশিতে ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কোনো দিকে না তাকিয়ে একেবারে চোখ-মুখ খিঁচে দৌড় শুরু করলাম। এমনিতে ২০০ মিটার এমন কিছু না, কিন্তু ক্লাস সেভেনের একটা ছেলের কাছে ২০০ মিটার অনেক লম্বা দূরত্ব। তার ওপর যদি সেটা হয় চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা, তাহলে তো কথাই নেই। একটা সময় যখন আমি মোটামুটি নিশ্চিত, আমার পক্ষে ২০০ মিটার দৌড় শেষ করা সম্ভব নয়, ঠিক তখনই আমার হাতে বেশ কয়েকটা হাতের ছোঁয়া পেলাম। ভালো করে তাকিয়ে দেখি, আমার চারপাশে এক দল শিক্ষক আর ছাত্রছাত্রী। বুঝলাম, দৌড় শেষ করতে পেরেছি। দৌড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা আমাকে তাৎক্ষণিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করলেন। আমাকে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী (প্রথম স্থান) ঘোষণার তোড়জোড় চলছিল, তখনই ভিড়ের বাইরে থেকে কেউ একজন আপত্তি জানালেন। দরাজকণ্ঠে তিনি বললেন, ‘এখানে আপনারা পক্ষপাতিত্ব করেছেন। যাকে আপনারা বিজয়ী ঘোষণা করেছেন, সে প্রকৃতপক্ষে বিজয়ী নয়। শিক্ষকের ছেলে বলে তাকে আপনারা টাচলাইন অতিক্রম করার আগেই টেনে ভেতরে ঢুকিয়েছেন। সুতরাং এ পুরস্কার ওর প্রাপ্য নয়।’ ভিড় ঠেলে বাইরে বক্তার উদ্দেশে তাকাতেই আমরা সবাই যেন বরফের মতো জমে গেলাম। কথাগুলো অবিশ্বাস করার কোনো উপায় ছিল না। কারণ, যিনি কথাগুলো বলেছেন, তিনি স্বয়ং আমাদের স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক, আমার জন্মদাতা পিতা!
আশীষ মণ্ডল
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৮, ২০১১
Leave a Reply