দশম শ্রেণীতে ওঠার পর থেকে নিজেকে অনেক সিনিয়র সিনিয়র বলে মনে হতে লাগল। স্কুল পালানোর অভ্যাস আমাদের অষ্টম শ্রেণী থেকে। স্কুলের পাশেই ভোলা স্টেডিয়াম। একদিন স্কুল পালিয়ে খেলতে গিয়েছিলাম স্টেডিয়ামে। দল ভাগাভাগি করে যখন খেলা শুরু করলাম, তখন দেখি আমাদের স্কুলের এক কর্মচারী দৌড়ে আসছেন, যাঁকে আমরা মামা বলে ডাকি। মাঝেমধ্যে তাঁকে আমরা পান-বিড়ি উপহার দিতাম। এতে করে তিনি আমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বললেন, হেড স্যার নাকি ক্লাস পরিদর্শনে এসেছিলেন।
আমাদের ক্লাসে এসে দেখেন যে বোর্ডে লেখা, উপস্থিত ছাত্রসংখ্যা ৬৪ কিন্তু ক্লাসে তখন উপস্থিতি মাত্র ৪৯ জন। তখন হেডস্যার আমাদের শ্রেণীশিক্ষককে তলব করলেন। শ্রেণীশিক্ষক আমাদের পাকড়াও করতে নাকি এদিকেই আসছেন। আমরা কোনো উপায় না দেখে পশ্চিমের গ্যালারিতে গেলাম। সেখান থেকে স্যারের আগমন দেখতে পেলাম। এদিকে গ্যালারিটি ছিল ধর্মসাগরের পাশেই। একদিকে স্যার, অন্যদিকে ধর্মসাগরের টলমলে পানি। কোনো কিছু না ভেবেই দিলাম গ্যালারি থেকে ধর্মসাগরে লাফ এবং কোনোমতে সাঁতরে পার হয়ে অপর তীরে উঠলাম। অন্য সময় হলে কখনো সাঁতরে পার হতে পারতাম না। কিন্তু তখন স্যারের ভয়ে আমাদের ওপর দৈবশক্তি ভর করল এবং ফলস্বরূপ এই ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিলাম। সেবারের মতো রক্ষা পেলেও শেষ রক্ষা হলো না। পরদিন অনেকটা সাহস করেই স্কুলে গেলাম। যথারীতি স্যার লাল টেপ মোড়ানো বেত নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করলেন। একটি নির্মম হাসি হাসতে লাগলেন আমাদের দেখে। একে একে প্রত্যেককেই আট ঘা বেত মারলেন এবং সহাস্যে বললেন, ‘১০ ঘা করে মারার চিন্তা ছিল, কিন্তু ধর্মসাগর সাঁতরে পার হওয়ায় ২ ঘা বেত কম মারলাম। আবার পালালে এই ডিসকাউন্টটুকুও পাবি না। মনে রাখিস!’ হায় রে আজব ডিসকাউন্ট।
মো. ইমতিয়াজ হোসাইন
কুমিল্লা জিলা স্কুল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৮, ২০১১
Leave a Reply