স্কুল পালিয়ে নজরুল হওয়া না গেলেও রবার্ট ব্রুস হওয়া যায়। এ কথাটি অন্তত আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। বন্ধুদের সঙ্গে স্কুল পালিয়ে ক্রিকেট খেলা আমার কাছে মহা আনন্দের ব্যাপার। এমনই একদিন বন্ধুদের সঙ্গে স্কুল পালিয়ে খেলতে গিয়েছিলাম। খেলা শেষে যখন বাসার দিকে যাব, তখনই দেখি এই রাস্তা দিয়ে আসছেন শাহজাহান স্যার। রাস্তার ধারে একটা দেয়ালের ওপারে আমাদের বাসা। উপায়ন্তর না দেখে আমি দেয়াল টপকে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার বড় ভাইয়ার জন্য কাজটা যত সোজা, আমার জন্য ততটা সোজা নয়। কারণ, অন্য সবার চেয়ে আমি একটু ছোটই ছিলাম। দেয়াল বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকবার পড়ে গেলাম। এদিকে স্যার খুব কাছে চলে এসেছেন। আমি আবারও চেষ্টা করলাম এবং পড়ে গেলাম। শেষমেশ আমি দেয়াল বেয়ে খানিকটা উঠলাম এবং শক্ত করে দেয়ালের ওপরে ধরে উঠতে চেষ্টা করলাম কিন্তু আর উঠতে পারছি না। হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেখি স্যার হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে এসে আমার পিঠে ধরে দেয়াল পার করে দিলেন। আমি ভয়ে ভয়ে বাসায় গেলাম এবং ভাবতে লাগলাম, পরদিন স্যার আমাকে কেমন ধোলাই দেবেন। পরদিন ক্লাসে স্যার আমাকে কিছুই করলেন না; তবে পুরো ক্লাসে সেই ঘটনা ফলাও করে ঘোষণা করে দিলেন। লজ্জায় তো আমি বেঞ্চের নিচে লুকাই এমন অবস্থা। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, সব শেষে স্যার বলেছিলেন, ‘রবার্ট ব্রুস যেমন বারবার হেরেও চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, আমাদের রকিবও বারবার পড়ে গিয়েও চেষ্টা করে গেছে।’ এরপর থেকে বন্ধুরা আমাকে ‘স্কুল পালিয়ে রবার্ট ব্রুস’ বলে খেপায়।
রকিবুল হাসান
কক্সবাজার, চকরিয়া।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৮, ২০১১
Leave a Reply