আমি ক্লাস এইটে পড়ি। আমার আব্বু-আম্মু দুজনই চাকরি করেন। তাই তাঁরা আমাকে একটা মুঠোফোন দিয়েছেন, যাতে আমার কোনো সমস্যা হলে তা ফোন করে জানাতে পারি।
ক্লাসে মুঠোফোন ব্যবহার করা নিষেধ। তাই আমার প্রয়োজনের সময় মুঠোফোন অন করে কথা বলে আবার বন্ধ করে ব্যাগে রেখে দিই।
আমদের সমাজ পরীক্ষা চলছে। সমাজের স্যার ব্যাগ হাতিয়ে মুঠোফোন পেয়ে প্রচণ্ড রাগারাগি করতে লাগলেন, নিষেধ করার পরও মুঠোফোন কেন ব্যাগে? আমি বললাম, এটা তো বন্ধ করে রেখেছি, স্যার। কোনো সমস্যা নেই।
স্যার রেগে আগুন হয়ে গেলেন। বললেন, সমস্যা নেই মানে? এটা বন্ধ করতে যদি কখনো ভুলে যাও আর পরীক্ষা চলার সময় যদি কেউ রিং করে হ্যালো হ্যালো শুরু করে, তখন কী করবা তুমি? কত বড় ডিসটার্ব হবে বুঝতে পারছ? ক্লাসে মুঠোফোনে আলাপ করলে সবার মনোযোগ নষ্ট হয়। বিরাট বড় সমস্যা। ক্লাসে মুঠোফোন ব্যবহার করা কঠোরভাবে নিষেধ, মনে থাকে যেন। আর পরীক্ষার সময় তো এটা একেবারে হারাম।
স্যার এসব বলে আমাকে বকাঝকা করে রাগে কাঁপতে কাঁপতে যেই চেয়ারে বসতে গেলেন, অমনি স্যারের পকেটে মুঠোফোন বেজে উঠল।
স্যার তাড়াতাড়ি পকেট থেকে মুঠোফোনটা বের করে কানে লাগালেন। তিনি ক্লাসজুড়ে হাঁটছেন আর হাত-পা ছুড়ে জোরে জোরে বলতে লাগলেন, ‘অই আমি কয়বার কইতাম রে, এহন যে বাইত আইতাম না। পোলাইপাইন্তের পরীক্ষা চলতাছে। আমি ঈদের আগের দিন বাইত যামু। টেহা পাডাইয়া দিছি। এহেন কোরবানির গরুডাও কি ঢাহাত্তে গিয়া আমারই কিন্না দিতে অইব নাকি?
এত চিন্তার কাম নাই। যেইডা কই হেইডা হোন। তরা পুইট্রার বাজারতে গরু কিন্না লা। এই হোন, লেঙুর টিপ্পা চোটপাট দেইক্কা হারগরু কিনবি। গরু বালা কইরা আডাইয়া ওডাইয়া দেইক্কা লইছ। ছয় দাইত্তা লম্বা ছেও দেইক্কা কিনিছ।
শিবু কাহা আর সুফির বাফেরে লইয়া বাজারে যাইছ, বুজজছনি। হেরা গরু চিন্না কিনতে পারে। ঢাহা কিন্তু গরুর দম হাইরা কম। হ হ আর কতা বারাইছ না। এত তুহিমুহি করছ কিয়ের লাইগ্গা? মুক্কি মাইরা গরু একটা কিন্না লা।
আইচ্ছা, এহন রাহি।’
স্যারের কথার জন্য আমরা খাতায় একটা অক্ষরও লিখতে পারিনি। কান ঝালাপালা। আমি বললাম, স্যার আপনি ক্লাসে যে জোরে জোরে কথা বললেন, তখন আমাদের ডিসটার্ব হয় না বুঝি?
স্যার বললেন, ‘এই ফাজিল মাইয়া পরীক্ষা থুইয়া কটর কটর কথা কিসের? পরীক্ষার সময় এক মিনিটের দাম কত জানছ? কতা থুইয়া হোমানে লেইক্কা যা।’
সমাজ পরীক্ষার সময় আমরা কতটা বিপদের মধ্যে ছিলাম, এখন বুঝতে পারছেন?
সুমাইয়া বরকতউল্লাহ
ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৮, ২০১১
Leave a Reply