এসবের জন্য ওর মা-ই দায়ী। সারা রাত বিশ্বকাপ ফুটবল উপভোগ করেছিল সনু। নিয়ম অনুযায়ী, দিনের বেলায় ঘুমানোর কথা ওর। কিন্তু ওর ভীষণ রাগী মা জোর করে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এ কারণেই পেছনের দিকের একটা বেঞ্চে শুয়ে ছিল সনু। বেঞ্চগুলো বেশ বড়। আমি ওর পাশে বসেছিলাম। ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে থেকেই আমি ওকে ডাকছিলাম। বেচারা ঘুুমিয়ে গিয়েছিল। বারবার আমার হাত সরিয়ে দিচ্ছিল। আমি এত করে বলছিলাম, কাশেম স্যারের ক্লাস (উনি এই স্কুলের ত্রাস)! হঠাৎ হুড়মুড় করে ক্লাসে এলেন কাশেম স্যার। সবাই উঠে দাঁড়াল। আমিও উঠে দাঁড়িয়ে ডান হাত দিয়ে সনুকে জাগানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলাম। সামনের সবাই আমার আগেই বসে পড়াতে স্যার বিষয়টা খেয়াল করেছিলেন। উনি বললেন, ‘এই, কিরে, তোর কী ব্যাপার?’ পাশ থেকে একজন বলে দিল, ‘স্যার, কুম্ভকর্ণকে জাগাইতেছে।’ স্যার ঝড়ের বেগে উড়ে এলেন। সনুর দিকে তাকিয়ে বড় করে একটা দম নিলেন। আমরা আশায় আছি, বজ্রপাত হবে। কিন্তু না, স্যার আস্তে করে সনুর গায়ে হাত রাখলেন, সনু আস্তে করে হাতটা সরিয়ে দিল। স্যার আবার হাত রাখলেন, এবার ঝটকা মেরে সরিয়ে দিল ও। স্যারও নাছোড়, আবার হাত দিয়ে জাগাতে গেলেন সনুকে। এক ঝটকা দিয়ে সনু বলল, ‘সর শালা! ডিস্টার্ব করিস নে।’ আমি ফিক করে হেসে উঠলাম। স্যার আমার দিকে তাকাতেই হাসিটা গিলে ফেললাম। স্যার বললেন, ‘সনু রে, তোকে আজ কোরবানি দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।’ তড়াক করে লাফ মেরে সোজা হয়ে গেল সনু। এক মুহূর্ত স্যারের দিকে তাকিয়ে ঝেড়ে দৌড় মারল পেছনের দরজা দিয়ে। ওর অমন অপ্রত্যাশিত আচরণে আমরা স্তম্ভিত। হঠাৎ হো হো করে হাসতে শুরু করলেন কাশেম স্যার।
পারভেজ
স্টেডিয়ামপাড়া, মেহেরপুর।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৮, ২০১১
Leave a Reply