দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে প্রাইমারি স্কুলে যাওয়া মাত্র শুরু করেছি। নতুন ক্লাসে অঙ্কের স্যার ৫৫-৬০ পর্যন্ত কথায় লিখতে দিয়েছেন। আমি বাড়িতে নির্ভুলভাবে বাবার কাছে বহুবার ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত কথায় লিখে দিয়েছি। সুতরাং খুব তাড়াতাড়ি লেখা শেষ করে টেবিলে খাতা জমা দিলাম। স্যার প্রথমেই আমার খাতা হাতে নিয়ে নাম ধরে ডাক দিলেন। লেখা ভালো হয়েছে ভেবে খুব আনন্দে স্যারের কাছে যেতেই কান মলার সঙ্গে পিঠে ডাস্টার পেটা ফ্রি পেলাম! আমি পঞ্চাশ-ছাপ্পান্ন… এভাবে লিখেছি। স্যার এগুলো ভুল লেখা ভাবলেন। তিনি আমার লেখা কেটে এভাবে লিখলেন, পাঁচপোনচাস, ছপোনচাস…, (আঞ্চলিক ভাষায়)। আমি কাঁদতে কাঁদতে বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। অতঃপর স্যার অঙ্ক বই খুলেই আসল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ক্লাসের সবাইকে বললেন, ‘তোমরা বইয়ের লেখাও লিখতে পারো আবার পাঁচপোনচাস, ছপোনচাস… এভাবেও লিখতে পারো।’ অন্য কারও খাতা না দেখেই স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন। এ স্কুলেই প্রাইমারি জীবন কেটেছে আমার। কিন্তু সেই গুণধর স্যারের দেখা আর মেলেনি। পরে জেনেছিলাম, সেদিনের অঙ্ক ক্লাসের স্যার আসলে কোনো শিক্ষক নন। তিনি অঙ্ক স্যারের আত্মীয়। অঙ্ক স্যারের পরিবর্তে ক্লাস নিতে এসেছিলেন!
মো. মতিউর রহমান
চাঁদপুরা, টেকেরহাট।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৮, ২০১১
Leave a Reply