অঙ্কের ক্লাস, স্যার কয়েকটা অঙ্ক করতে দিয়ে ঝিমোতে লাগলেন। আমি সব অঙ্কের বিভিন্ন অংশ জোড়াতালি দিয়ে দুই পৃষ্ঠা ভরিয়ে গবেষণায় লেগে গেলাম। গবেষণার বিষয়: টেস্ট পেপারসিন রোগ এবং আমাদের ফার্স্ট গার্লের মানসিক বিকাশে এর ক্ষতিকর প্রভাব। টেস্ট পেপার প্র্যাকটিস করতে করতে যে রোগ হয়, সেটাই টেস্ট পেপারসিন রোগ। গবেষণার একপর্যায়ে অত্যধিক উত্তেজনাবশে বেঞ্চে কিল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুনতে পেলাম, এই চশমা, আর চশমার পাশেরটা, দাঁড়া। কিছু বোঝার আগেই আমার পাশের মেয়েটা তড়াক করে দাঁড়িয়ে গেল। ওর পাশে আর কে কে চশমা পরে আছে, তা দেখার আগেই আমার ফ্রেন্ডগুলো আমাকেও ঠেলেঠুলে দাঁড় করিয়ে দিল। বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। বন্ধু না ছাই। নিজেরা বাঁচার জন্য আমাকে বিপদে ফেলে দিল। স্যার যাক। দেখা যাবে, কত ভুট্টায় কত পপকর্ন…।
স্যার বললেন, এত কথা কিসের? কথা বলছিস কেন? পাশের মেয়েটা (নাম মনে নেই) অবাক হওয়ার ভান করে বলল, ‘স্যার, আমি কথা বলেছি! আমি!’ কী সাংঘাতিক পাজি! ইচ্ছা করছিল, ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে বলি, ‘আমি ধাক্কা মারছি? আমি?’
ওকে বসিয়ে দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এক বেঞ্চে এতজন বসেছিস কেন? আশপাশের সব বেঞ্চ ফাঁকা, আর এই বেঞ্চে জনসংখ্যা আধিক্য কেন? আমি বললাম, ‘স্যার, আমাদের আন্তমানবিক শক্তি বেশি।’
সবাই হেসে ফেলল। আর স্যার কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে হঠাৎ বলে উঠলেন, পিথাগোরাসের উপপাদ্যের সাধারণ নির্বচন মুখস্থ বল। ইশ্! একবারে মোক্ষম অস্ত্র! স্বাস্থ্যবান মানুষের কী চিকনা বুদ্ধি রে বাবা! ‘স্যার, একটু বই দেখে এরপর বলি?’
স্যার হুংকার দিয়ে উঠলেন।
কথা বলার জন্য তো বই দেখা লাগে না, খালি পড়া জিজ্ঞেস করলে বই দেখতে ইচ্ছা করে, না? এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাক।
কী আর করা। অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম, রাগে, দুঃখে, অপমানে আমার কান দুটো লাল হয়ে গেছে।
সবার দিকে তাকিয়ে দেখি, সবাইকে কেমন যেন ব্যাঙ ব্যাঙ লাগছে। মনে হচ্ছে, অনেক ব্যাঙ স্কুল ইউনিফর্ম পরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চরম দুঃখের মধ্যেও আমার হাসি পেল। আমি হাসি আটকে রাখতে গিয়ে ফিক করে হেসে স্যারের কাছে ধরা খেয়ে গেলাম। পুনরায় শুরু হলো, বেশরম…বেহায়া। পশুপাখি থেকেও খারাপ…এত কিছুর পরও কী রকম হাসছে…।
চন্দ্রবিন্দু
খুলশী, চট্টগ্রাম।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৮, ২০১১
Leave a Reply