আমি তখন দশম শ্রেণীর ছাত্র। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু শরীফ পাশের গ্রামের এক মেয়ের প্রেমে পড়ে। ওই গ্রামের মধুপুর উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সে। মধুপুরে শরীফের মামার বাড়ি হওয়ায় প্রায়ই সে সেখানে যেত। মেয়েটির সঙ্গে নাকি তার কথাও হয়েছে। কিন্তু মনের কথা প্রকাশ করতে না পারার যন্ত্রণা সইতে না পেরে আমাকে ধরল একটি চিঠি লিখে দিতে। মানে প্রেমপত্র। আমাকে নিজ খরচে সিনেমা দেখানোর প্রস্তাবও দিয়ে দিল সঙ্গে। আমিও রাজি। একদিন আমার রুমে বসে একটি নতুন প্যাডের কাগজ ছিঁড়ে প্রেমপত্র লিখতে বসে গেলাম। ব্যাপারটা যে রচনা লেখার মতো সহজ নয়, সেটা টের পাচ্ছিলাম। যা হোক, অনেক ভেবেচিন্তে যা লিখলাম তার কয়েকটি লাইন ছিল এ রকম: প্রিয় লাইলী (মেয়েটির নাম), কেমন আছ? নিশ্চয়ই ভালো। আমি ভালো নেই। তোমাকে এক দিন না দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই। তাই তো আমি মধুপুরে ছুটে আসি।
চিঠিটা শেষ করার আগেই আমার এক বন্ধুর ডাকে বাসা থেকে বের হয়ে যাই। চিঠিটা ছিল বইয়ের ভেতরে ভাঁজ করা। দুপুরের দিকে বাসায় আসি। প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। আম্মাকে বলি ভাত দিতে। আম্মা কোনো কথাই বলছে না। বড় ভাইয়া আমাকে দেখামাত্রই ছুটে আসে মারার জন্য। আপা তো এরই মধ্যে দু-একটা থাপড় মেরে বসে। ভাইয়া বলে, ‘ওকে বাসা থেকে বের করে দাও। ওর পড়াশোনার দরকার নেই।’ সবাই আমার সঙ্গে এ রকম ব্যবহার করছে কেন? হঠাৎ চিঠিটার কথা মাথায় আসে। দৌড়ে রুমে গিয়ে দেখি, চিঠিটা নেই। সব পরিষ্কার হয়ে যায়। বাসার কেউ না-কেউ চিঠিটা পেয়েছে। পরে জেনেছি, এটা হচ্ছে আমার ফাজিল ছোট ভাইটার কাজ। সবাই ভেবেছে, চিঠিটা আমার এবং আমিই লাইলীর প্রেমে পড়েছি। যা হোক, সপ্তাহজুড়ে নিগৃহীত থাকার পর পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়। বেচারা শরীফকে কি মারটাই না মেরেছিলাম। ওর জন্যই তো আমাকে প্রেমে না পড়েও প্রেমপত্র লেখার খেসারত দিতে হলো।
কাজী হুমায়ুন কবীর
ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৮, ২০১১
Leave a Reply