ক্লাস থ্রি কি ফোরে পড়ি, ভৈরব চণ্ডিবের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিজ্ঞান ক্লাস নিতেন জালাল স্যার। অসম্ভব রাগী কিন্তু কোমল মনের ছিলেন স্যার। কোনো কিছু না বুঝে তাঁর ক্লাস থেকে বের হব, সে উপায় কখনোই ছিল না। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। তাড়াতাড়ি স্কুল ছুটি হয়ে যাবে। শেষ ক্লাস যথারীতি জালাল স্যারের বিজ্ঞান ক্লাস। ক্লাসে ঢুকেই স্যার প্রশ্ন করলেন কে কে নিজের চোখে রংধনু দেখেছি। বেশির ভাগ উত্তরই ছিল ‘না’। স্যারের চোখেমুখে খুশির ছটা। আজ তিনি আমাদের রংধনু তৈরি করে দেখাবেন। দুপুর ১২টা, ঝিলিক দিয়ে রোদ উঠেছে। স্কুলের ছোট্ট মাঠেই ছিল একটা টিউবওয়েল। স্যার সবাইকে টিউবওয়েলের চারপাশে ঘিরে দাঁড়াতে বললেন আর আমাকে বললেন টিউবওয়েল এবং সূর্যের বিপরীতে দাঁড়াতে। স্যার টিউবওয়েল চাপছেন আর আমাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন, মুখভর্তি পানি নিয়ে মুখ উঁচু করে সূর্যের বিপরীতে কুলকুচি করলেই অন্যেরা রংধনু দেখতে পাবে। বৃষ্টির সাহায্য ছাড়া এটাই রংধনু দেখার সবচেয়ে সহজ উপায়। বাধ্য ছাত্রের মতো মুখভর্তি পানি নিলাম, মুখ উঁচু করলাম এবং চোখ বন্ধ করে দিলাম কুলকুচি করে। চোখ খোলার আগেই সবার অট্টহাসি কানে এল। ভেতরে ভেতরে খুব অহংবোধ কাজ করছিল—আমার দ্বারা সবার রংধনু দেখা হচ্ছে। ধীরে ধীরে চোখ খুললাম। একি! কোথায় রংধনু! আমার মুখনিঃসৃত কুলকুচির পানিতে স্যারের সারা মুখ সয়লাব।
তানজিলা হ্যাপী
ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৮, ২০১১
Leave a Reply