প্রতিদিন ক্লাসের আগে পিটি করা অতি বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। না করলেও আবার শাস্তি। কেমন লাগে! পিটি পিরিয়ডের পরে দারোয়ান কাউকে স্কুলে ঢুকতে দেয় না। হেড স্যারের নির্দেশ। ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
যাই হোক না কেন আজ পিটি করছি না। দরকার হলে দারোয়ানের হাতে ১০ টাকা গুঁজে দিয়ে পরে ঢুকব। এই ভেবে একটু দূরে চায়ের দোকানে গিয়ে কিছুক্ষণ বসি। পিটি পিরিয়ড শেষ হলে স্কুলের দিকে রওনা হই। কিন্তু দারোয়ানকে ঘুষ দিতে সাহসে কুলোয় না। হিতে বিপরীত হতে পারে। স্কুলের পেছন দিকের দুই ফুট উঁচু দেয়াল টপকানো ছাড়া ক্লাসে যাওয়ার আর কোনো উপায় নেই। গাছে ভালো উঠতে পারি। দুই ফুট দেয়াল টপকানো তেমন কঠিন কিছু হওয়ার কথা না। কাজেই ওদিকে পা বাড়াই।
স্কুলে ঢুকে সতর্ক দৃষ্টিতে চারদিকে লক্ষ করি, কেউ আবার দেখে ফেলল না তো? ক্লাসে যাওয়ার সময় লক্ষ করলাম, কেউ কেউ আমাকে দেখে হাসছে। মনে হয় ধরা খেয়ে গেছি। ধরা খেয়েছি ভালো কথা, কিন্তু তোদের এত হাসির কী হলো!
ক্লাসে গিয়ে দেখি স্যার এখনো আসেননি। যেন কিছুই হয়নি, এমন ভাব করে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসি।
একটু পরে লক্ষ করলাম, মেয়েরা মিচকি মিচকি হাসছে। হাসির কারণ যে আমি, তা বুঝলাম। কারণ, মাঝেমধ্যে আমার দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে। ছেলেরাও কেউ কেউ হাসছে।
মেয়েগুলোর অনেক বাড় বেড়ে গেছে। আমাকে দেখে হাসার কী হলো! আমি চিড়িয়াখানার হনুমান নাকি! বিচার দিয়েছিস ভালো কথা, কিন্তু এতে হাসির কী হলো! আমিও তোদের দেখে নেব। এক মাঘে শীত যায় না।
এসব যখন ভাবছি, তখন আমার এক বন্ধু কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, ‘দোস্ত, তোর প্যান্টের পেছনে ছেঁড়া।’
হাসির কারণটা বুঝলাম। কিন্তু মান-ইজ্জত যা যাওয়ার তা ইতিমধ্যে চলে গেছে। এতক্ষণে বুঝলাম, দেয়াল টপকানোর পর থেকে পেছন দিকে এ রকম ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছিল কেন।
নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৮, ২০১১
Leave a Reply