২০০১ সালের ঘটনা। আমি তখন ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়েছি। নতুন স্কুল। সবকিছু অপরিচিত। কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো বন্ধু জুটল না। দিন কয়েক পরে এক ছেলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেল। ওর নাম রাজীব। কথাবার্তা কম বলে, কিছুটা বোকাসোকা ধরনের। ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার আরেকটি কারণ ছিল, আমাদের দুজনের রোল নম্বর ছিল পাশাপাশি। যা-ই হোক, দেখতে দেখতে কয়েক মাস পেরিয়ে সামনে হাজির হলো প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। রোল নম্বর পাশাপাশি হওয়ার কারণে আমাদের সিটও পড়ল এক বেঞ্চে। রাজীব এমনিতেই পড়াশোনা কম করে। তাই আগেই বলেছিল, আমি যেন ওকে পরীক্ষায় সাহায্য করি। আমি যতটুকু পারব ততটুকু করব বলে আশ্বাস দিয়েছিলাম। বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার ব্যাকরণ অংশে এসেছিল বাগধারার অর্থসহ বাক্যরচনা। এর একটি ছিল ‘পটল তোলা’। রাজীব আমাকে জিজ্ঞেস করল, এর অর্থ কী? আমি বললাম, ‘মারা যাওয়া।’ ও বোধ হয় ভালো করে শুনতে পায়নি, তাই আবার জিজ্ঞেস করল। আমি বলতে যাব এমন সময় পেছন থেকে স্যার এসে পিঠে দিলেন এক চড় আর বললেন, আবার কথা বললে দুটোকেই বের করে দেব। ওই দিন পরীক্ষায় আমরা আর কথা বলিনি। পরীক্ষা শেষ হলো। কিছুদিন পর খাতা দেওয়া শুরু হলো। একদিন স্যার বাংলা দ্বিতীয় পত্রের খাতা নিয়ে এলেন। আমার খাতার পরই রাজীবের খাতা। স্যার হাতে খাতা নিয়ে কয়েকবার উল্টিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, রোল নম্বর ২৫ কে? রাজীব দাঁড়াল। স্যার বললেন, ‘আমাদের রাজীব বাগধারায় খুব ভালো। সে কী লিখেছে তা কি তোমরা শুনতে চাও?’ সবাই সমস্বরে বলল, ‘জি, স্যার।’ স্যার তখন রাজীব কী লিখেছে তা পড়ে শোনালেন। রাজীব লিখেছে, ‘পটল তোলা (মারা যাওয়া) = আজ পটল তুলে রাতে ভাজি করে মজা করে খাব।’ শুনে আমি রাজীবের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম।
শিমুল, আইন বিভাগ, সূর্য সেন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৮, ২০১১
Leave a Reply