বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে পত্রিকার পাতা এখন ক্রিকেটের মাঠ। এই মুহূর্তে যাঁরা মাঠে খেলছেন, তাঁরা তো তাঁদের মূল্যবান মত দিচ্ছেনই; যাঁরা আগে খেলতেন, তাঁরাও মত দিচ্ছেন, বিশ্লেষণ করে করে ফাটিয়ে ফেলছেন। যাঁরা কোনোকালেই খেলেননি এবং ভবিষ্যতেও খেলার কোনো সম্ভাবনা নেই, তাঁরাও কলম হাতে দুর্দান্ত ব্যাট চালাচ্ছেন পত্রিকার পাতায়। কবি-সাহিত্যিকেরা সেজেছেন লেখোয়াড়। এমনি একসময় রস+আলো যোগাযোগ করেছিল দেশ-বিদেশের প্রয়াত-অপ্রয়াত বিভিন্ন পেশার প্রতিথযশা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে। ক্রিকেট নিয়ে তাঁরাও বেশ মূল্যবান অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। রস+আলোর হয়ে সেসব সংগ্রহ করেছেন কাজী ঐশী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সত্যই, শ্বেতশুভ্র গোলক আর একচিলতে কাষ্ঠখণ্ড দ্বারা মনোরম ডাংগুলি খেলা দেখিয়া হূদয়কোণে যে পুলক বোধ হইতেছে, তাহা ভাষায় প্রকাশ করিতে পারিব না। জগৎ আগাইয়া যাইতেছে, অবুঝ-সবুজেরা গা ঝাড়া দিয়া উঠিতেছে। আহা, আজি হইতে শতবর্ষ পরেও যেন এই খেলা বজায় থাকে!
কাজী নজরুল ইসলাম
সাদা, কালো, বাদামি—নানা জাতের মিলনমেলায় আজ গাহিয়া উঠি সাম্যের গান। ব্যাটের সংঘর্ষে, বলের ঘূর্ণনে যৌবনের স্ফুরণ, প্রতিপক্ষ বোলারদের অগ্নিগোলক সত্ত্বেও ব্যাটসম্যানদের চির উন্নত শির দেখিয়া আমার কবিহূদয় তাহাদের গান গাহিয়া ওঠে! মার ঘুরিয়ে, তবেই আমি হব শান্ত!
সুকান্ত ভট্টাচার্য
ক্রিকেট? আহা! ক্রিকেটের বল যেন রসাল রসগোল্লা, ব্যাট যেন লম্বা বনরুটি। আর লম্বা স্টাম্পগুলো যেন দেশলাইয়ের কাঠি। জ্বলে-পুড়ে ব্যাটসম্যানকে করবে ছারখার।
শায়েস্তা খান
আজ আমার মেজাজ বড়ই খুশ! সবকিছু অগ্নিমূল্য হইলেও নবাবি সিম দিয়া ওয়ার্ল্ডকাপ কুইজ খেলিয়া ২০টি টাকা পাইয়াছি! সেই টাকা হইতে আট মণ চাল কিনিবার পর এখন রইল বাকি ১৯ টাকা।
হাজি মুহম্মদ মুহসীন
একটা স্বর্ণনির্মিত পেয়ালার জন্য এতগুলি লোক ঘাম ঝরাইতেছে! কী বেদনাদায়ক! কে আছিস, আমার টাকার বক্সটা বের কর! সবাইকে একটা করে সোনার পেয়ালা দে। আর ইতিমধ্যে যে অনেক বেশি ঘাম ঝরিয়ে ফেলেছে, তাকে বায়তুল মোকাররমের একটা জুয়েলারির দোকান লিখে দে।
মিসির আলী
এই বয়সে খেলাধুলা আমাকে তেমন আকর্ষণ করে না, তবে এই মুহূর্তে খেলা দেখছি এবং বোঝার চেষ্টা করছি, কোন ওভারে কত রান হবে। আমার যুক্তির বিচারে এই ওভারে ২ রান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৭ রান হয়েছে। বৃদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার লজিক কি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে?
হিমু
আজকাল এক ব্যাপার হয়েছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে ঢাকার কয়েকটা এলাকা ঝেড়ে-মুছে তকতকে করে ফেলা হয়েছে। রাত ১২টার পর ওই রাস্তাগুলোয় হাঁটতে ভালোই লাগে। রাস্তার আইল্যান্ডে বিশাল আকৃতির ফুল আর পাখি দেখে যথেষ্টই আনন্দ পেয়েছি। সেদিন রাস্তায় মাজেদা খালার সঙ্গে দেখা। তিনি বিরাটাকার দোয়েল পাখি দেখে কিশোরীদের মতো ‘ও আল্লাহ, এইটা কী?’ বলে বিকট চিৎকার দিলেন। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসলাম…। রূপা ওই হাসি দেখলে খুব বিরক্ত হতো।
পিথাগোরাস
‘অ’ বিন্দুতে ব্যাটসম্যান এবং ‘ই’ বিন্দুতে বোলার থাকলে ‘অই’ যদি সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ হয়, তাহলে ধরি, আমার প্রিয় দল বিজয়ী…।
আইজ্যাক নিউটন
আমি এখন ব্যস্ত। সেদিন পাড়ার ছেলেরা ক্রিকেট খেলার সময় বল এসে আমার মাথায় পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে মাধ্যাকর্ষণের দ্বিতীয় সূত্র আবিষ্কার করে ফেললাম। এখন এটার গাণিতিক প্রমাণ নিয়ে কাজ করছি। বিরক্ত করবেন না…।
স্পাইডার ম্যান
ক্রিকেট তো আমার খুবই পছন্দ। আর ঢাকার স্টেডিয়ামের আশপাশে কত উঁচু উঁচু বিল্ডিং! তবে সেই দিন এক বিল্ডিংয়ের সানশেডে ঝুলে আরাম করে খেলা দেখছিলাম। এ সময় এক বেকুব জানালা খুলে দিল…। মেরুদণ্ডে এখনো ব্যথা আছে!
মীনা
আমরা সমানে সমান—ছেলে আর মেয়ে। তাইলে মাইয়াগো বিশ্বকাপে ক্যান এত বাতি লাগায় না? মাইয়াগো জন্যও এই ব্যবস্থা করতে হইব!
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০৭, ২০১১
Leave a Reply