বিশ্বকাপ নিয়ে রয়েছে রস+আলোর বিশেষ আয়োজন। রয়েছে ডিয়েগো ম্যারাডোনাসহ বিভিন্ন কলামিস্টের কলাম। সময়ের অভাবে তাঁরা কলামগুলো লিখতে পারেননি। তাঁদের হয়ে কলামগুলো লিখেছেন আদনান মুকিত
জনৈক তরুণী লিখছেন রস+আলোয়
বড় স্ক্রিনে মুখ দেখাতে চাই
ওয়াও! নিজের দেশে বিশ্বকাপ হচ্ছে, আমরা বিশ্বাসই করতে পারি না! কী সুইট একটা ব্যাপার! আমার বয়ফ্রেন্ড আমার জন্য অ-নে-ক কষ্ট করে টিকিট জোগাড় করেছে। আমরা দুজন মিলে খেলা দেখতে যাব। এ জন্য আমার কত প্ল্যান! পারলারে যেতে হবে, চুল রিবন্ডিং করতে হবে, ভ্রু প্লাক করতে হবে। উফ! কত টেনশন! এর ওপর কোন রঙের জামা পরব তা এখনো ঠিক করতে পারিনি। ওকে জিজ্ঞেস করতেই বলল, একটা পরলেই হয়! বললেই হলো? এটা কি মুগদাপাড়ার সঙ্গে শনির আখড়ার খেলা? এটা হলো বিশ্বকাপ। কত দেশের ক্যামেরা থাকবে, বড় বড় টিভি স্ক্রিন থাকবে। ইশ! ভাবতেই আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। আগের দিন মাঠে গিয়ে সিটের রংটা দেখে আসতে পারলে ভালো হতো। সিটের রঙের সঙ্গে ম্যাচিং করে ড্রেস পরতাম। স্টেডিয়ামে বড় স্ক্রিন বসিয়েছে। এমন মেকআপ নেব যে খেলা না দেখিয়ে বারবার আমাকে দেখাবে। আমার বান্ধবীরা টিভিতে আমাকে দেখে হাঁ হয়ে যাবে। আমি শিওর, দেখে সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিয়ে বলবে, ড্রেসটা কোথা থেকে কিনলি? রিবন্ডিং করতে কত লাগল? বলা যায় না, কোনো ডিরেক্টরের চোখে পড়লে অভিনয়ের চান্সও পেয়ে যেতে পারি। আজ আর না, আমার কত কাজ! দম ফেলার সময় নেই। দম ফেলার জন্য মাঝেমধ্যে দু-এক মিনিটের ব্রেক নিচ্ছি। সেই ব্রেকেই লেখাটা লিখে ফেললাম। বাই।
বিরোধীদলীয় নেতার কলাম লিখছেন রস+আলোয়
বিশ্বকাপ আয়োজনে ব্যর্থ সরকার
আমি বিরোধীদলীয় নেতা বলছি, দেশে বিশ্বকাপ চলছে। অথচ সরকার কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। আপনারা সবাই জানেন যে, এই সরকার বিশ্বকাপ আয়োজনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। মাত্র দুটি মাঠে বিশ্বকাপের খেলা হচ্ছে, যা জাতির জন্য অপমানজনক। আমাদের কি আর মাঠ নেই? অবশ্যই আছে। শুধু খেলার মাঠ নয়, আমাদের নকশিকাঁথার মাঠও আছে। আর আমরা ক্ষমতায় থাকলে দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি স্টেডিয়াম তৈরি করতাম। আপনারা জানেন, আজ যে বিশ্বকাপ হচ্ছে, এর প্রক্রিয়াটা আমরাই শুরু করেছিলাম। এবার আসি খেলার কথায়। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ভারতের কাছে হেরে গেল। কেন হেরে গেল, জনগণ তা ভালো করেই জানে। কে কার সঙ্গে গোপন আঁতাত করছে, জনগণের কাছে তা অজানা নয়। বাংলাদেশ যদি বিশ্বকাপে ভালো করতে না পারে তাহলে এর দায় কিন্তু সরকারকেই নিতে হবে। আর বিশ্বকাপের মতো একটা টুর্নামেন্ট চার বছর পরপর হবে, এটাও মেনে নেওয়া যায় না। আমরা কথা দিচ্ছি, আগামীবার ক্ষমতায় গেলে প্রতিবছর একটা করে বিশ্বকাপ আয়োজন করব।
দোকানদারের চোখে লিখছেন রস+আলোয়
চা-পান মিস করছে ক্রিকেটপ্রেমীরা
এটা কোনো কথা হলো? এত বড় একটা স্টেডিয়াম, সেখানে বিশ্বকাপের মতো খেলা হবে আর চা-পান বিক্রি করা যাবে না? বিভিন্ন দেশ থেকে দর্শক, খেলোয়াড় আসবে। তারা চা পাবে কোথায়? স্টেডিয়ামে একবার ঢুকে পড়লে তো খেলা শেষ হওয়ার আগে আর বেরোনো যাবে না। পাবলিক যে বাইরে এসে কড়া লিকারে বানানো চায়ে একটা চুমুক দিয়ে যাবে সে সুযোগও রাখেনি ব্যাটারা। নিজেরা তো ঠিকই রুমে বসে আরামে চা খাবি। গরিবের পেটে লাথি না মারলে ভালো লাগে না, না? লাথি মারার জন্য তো ফুটবল আছে, গরিবের পেটে লাথি মারার দরকারটা কী?
আমি চাইব, অচিরেই যেন চা-পানওয়ালাদের স্টেডিয়ামে ঢুকতে দেওয়া হয়।
বল-বয়ের কলাম লিখছেন রস+আলোয়
ছোট দলগুলোকে বাদ দেওয়া যাবে না
আমি সব সময় ছোট দলের পক্ষে। আইসিসি ছোট দলগুলোকে বিশ্বকাপ থেকে বাদ দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র করছে, আমি তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ছোট দলগুলো কত ভালো! তারা কত অল্প রানেই অল আউট হয়ে যায়। চার-ছয়ও মারে না বললেই চলে। ফলে আমাদের বলও কুড়াতে হয় না। আরামে বসে বসে ‘জলবায়ু পরিবর্তনে গান্ধীপোকার ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা করতে পারি। ব্যাটসম্যান চার মারলে এত রাগ লাগে যে কী বলব! ইচ্ছে করে বোলারকে গিয়ে কষে চড় মেরে আসি। আর কিছু ব্যাটসম্যান আছে এত খারাপ, দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। কথা নেই, বার্তা নেই—ধুমধাম চার মেরে বসে। একদিন এসে ১০০ ওভার বল কুড়াও না, বুঝবে মজা কাকে বলে। জীবনে আর চার মারার চিন্তাও করবে না। তবে যে বোলারদের বল মেরে ব্যাটসম্যানরা গ্যালারিতে পাঠায় তাদের আমার খুব ভালো লাগে। গ্যালারিতে বল গেলে দর্শকও খুশি, আমরাও খুশি। সাধারণত ছোট দলের বোলারদের বলই গ্যালারিতে বেশি যায়। এ জন্য আমি আবারও ছোট দলের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিচ্ছি। ছোট দলগুলোকে যদি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে আমরা বল-বয় ঐক্যজোট গঠন করে আন্দোলনে নামব।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০৭, ২০১১
Leave a Reply