ক্রিকেটারদের বদলে রাজনীতিবিদেরা যদি ক্রিকেট মাঠে নামতেন তাহলে কেমন হতো ব্যাপারটা? জানাচ্ছেন আলিম আল রাজি
গন্ডগোল শুরু হয়ে যেত খেলা শুরুর আগে থেকেই। কী হবে টুর্নামেন্টের নাম? কার নামে হবে কাপ? এ নিয়ে দুই দলের মধ্যে বিরাট ক্যাচাল লেগে যেত। এক দল বলত এই নামে হতে হবে টুর্নামেন্টের নাম, আরেক দল বলত অন্য নামে।
টসের মধ্যে শুরু হতো আরেক ঝামেলা। যে দল টসে হারত তারা শুরু করত হাউকাউ। ‘টসে কারচুপি হয়েছে’, ‘কয়েনের দুই দিকেই এক জিনিস ছিল, ‘এই টস মানি না, এই টস বাতিল করে আবার টস করতে হবে’—এই টাইপের চিল্লাচিল্লি করে মাঠ মাতিয়ে ফেলত পরাজিত দল।
অন্যদিকে বিজয়ী দল বুক ফুলিয়ে বলত, ‘ভাগ্য ওদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে’, ‘ভাগ্য আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে’। তারা দর্শকদের ক্রিকেটের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। পরাজিত দলকে পরাজয় ভুলে ভালো খেলায় যুক্ত হতে আহ্বান জানাত বিজয়ী দল।
খেলা মাঠে গড়ানোর ঠিক আগে আগে এক দল গোঁ ধরে বসত, এই আম্পায়ার তারা মানে না। এই আম্পায়ার হলেন ‘তাঁবেদার’। এই আম্পায়ার হলেন ‘দালাল’। তারা এই দালাল, তাঁবেদার আম্পায়ারের পদত্যাগ চায়। না হলে তারা খেলবে না।
অন্য দল বলত, খেলা এই আম্পায়ারের অধীনেই হতে হবে। ফলে দুই দলের মধ্যে আবার শুরু হতো ঝগড়া।
ঝগড়া থামাতে হস্তক্ষেপ করত আইসিসি। দুই দলের মধ্যে একটা ‘সংলাপ’ও হয়ে যেতে পারে। অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে দুই দলকে মাঠে নামানো হতো।
খেলা শুরুর পর আবার ঝামেলা। ব্যাটসম্যানরা চার মারলে বোলাররা গোঁ ধরত, তারা এই চার মানে না। এই চার হলো ক্রিকেটীয় সংবিধান-বহির্ভূত চার। কারণ সংবিধানের ৩৩ পৃষ্ঠার ৬ নম্বর লাইনে লেখা আছে, ব্যাটসম্যান চার মারার সময় কাশি দিলে সেই চার অবৈধ।
অন্যদিকে ব্যাটসম্যানরা সিঙ্গেল নিয়ে বলত ছক্কা মেরেছে। আউট হয়ে বলত আউট হয়নি। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে হলেও তারা সিঙ্গেলকে ছক্কা বানানোর ও আউটকে নটআউট বানানোর প্ল্যান করত।
বোলারদের মানববন্ধনে ব্যাট হাতে তেড়ে আসত ব্যাটসম্যানরা। ‘মৃদু ব্যাটচার্জ’ করে ছত্রভঙ্গ করে দিত বোলারদের।
একপর্যায়ে বোলাররা বলত, তাদের হরতাল ও মানববন্ধন সম্পূর্ণ সফল হয়েছে। দর্শকেরা বোলারদের সঙ্গে থেকে ব্যাটসম্যানদের প্রতি তাদের অনাস্থা প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে ব্যাটসম্যানরা বলত, দর্শক বোলারদের কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করেছে।
জটিলতা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করত খেলার শেষের দিকে, যখন জয়-পরাজয় নির্ধারণ হতো, তখন। যারা পরাজিত হতে যাচ্ছে তারা অন্য দলের বিরুদ্ধে লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে বসত।
আর জয়ী হতে যাওয়া দলও পাল্টা কর্মসূচি দিত। দুই দলের কর্মসূচির মাঝখানে পড়ে বারোটা বেজে যেত দর্শকদের।
খেলার সর্বশেষ রেজাল্ট হতো ইয়া বড় একটা গোল্লা, মতান্তরে ঘোড়ার আন্ডা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০৭, ২০১১
Leave a Reply