ডেট করতে গেলাম এক মেয়ের সঙ্গে। মেয়েটি এল, সঙ্গে তার বন্ধু। কুকুর। আমি মেয়েটির দিকে এগিয়ে যেতেই কুকুর সেই যে কামড়ে ধরল আমার প্যান্টের পায়া, আর কিছুতেই ছাড়ে না।
‘বিচ!’ গালি চলে এল আমার মুখে।
‘আমার কুকুরকে গালি না দেওয়ার অনুরোধ রইল। আর ও মাদি কুকুর নয়। তবে খুব অভিমানী।’ মেয়েটি জানাল।
পা ঝাড়তে ঝাড়তে তাকে বললাম, ‘সরিয়ে নাও না ওকে!’
‘কাজ হবে না। ওর কামড় মরণকামড়। দরকার হলে সারা দিন কামড়ে ধরে থাকবে। তার চেয়ে চলো হাঁটতে হাঁটতে গল্প করি।’
উজবুক এক কুকুরের কারণে ডেট পণ্ড করা উচিত হবে না বলেই মনে হলো আমার। আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। কিন্তু হাঁটা তো বড়ই বিড়ম্বনাকর! কুকুরটা ঝুলছে নোঙরের মতো।
‘এমন কুকুরের দরকার কী তোমার?’ জিজ্ঞেস করলাম।
‘ধর্ষকদের হাত থেকে রক্ষা পেতে। কে জানে, তোমার মাথায় কী আছে! আর জেনে রাখো, আমার কুকুর এক ধরনের বিশেষ কামড়ে অতিশয় দক্ষ—কোমরের নিচের অঞ্চলে।’
শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেল আমার শরীরের ভেতর দিয়ে।
আমি প্রশ্ন করলাম, ‘ও যদি প্যান্টের পায়া ছাড়া অন্য কোথাও কামড় দিত?’
‘এসব তুচ্ছ ব্যাপারে মন খারাপের অর্থ আছে, বলো?’
‘তুচ্ছ ব্যাপার!’ বলে আমি এত জোরে পা ঝাঁকালাম যে প্যান্টের পায়ার এক টুকরো কাপড়সহ কুকুরটা দূরে ছিটকে পড়ল। কিন্তু পরমুহূর্তেই ছুটে এসে কামড়ে ধরল প্যান্টের অন্য পায়া।
‘প্যান্ট মেরামত করে দেবে কে, শুনি? পুশকিন?*’ আমি জিজ্ঞেস করলাম।
‘চলো না, আমরা কবিতা নিয়ে আলোচনা করি।’ মেয়েটি প্রস্তাব দিল।
‘একটা কবিতা পড়ে শোনাও না! তোমার প্রিয় কোনো কবির।’
‘পুশকিনের?’
যেই না একটা কবিতা শোনাতে শুরু করব, অমনি কুকুরটা তার পেছনের পায়া তুলে ‘নিজস্ব এলাকা’র ছাপ বসিয়ে দিল আমার প্যান্টে, পায়ে।
আমি গালি দিতে শুরু করতেই মেয়েটা বলল, ‘ও তো এখনো ছোট। কিছু বোঝে না। কামড় ছেড়ে দেওয়ার কমান্ড দিলেও ও বুঝতে পারবে না।’
‘তাহলে কোন কমান্ড সে বোঝে?’
‘ধর!’
কুকুরটি তৎক্ষণাৎ প্যান্টের পায়া ছেড়ে দিয়ে আমার কোমরের নিম্নবর্তী অঞ্চলে কামড় দেওয়ার জন্য লাফ দিল। তবে তার আগেই আমি পাশের এক গাছে উঠে পড়তে সক্ষম হলাম।
‘নেমে এসো,’ অনুরোধ করল মেয়েটি। ‘আমি ওকে ধরে রাখব।’
‘আমি এখানেই বেশ আছি।’ বললাম গাছের ডালে আরাম করে বসতে বসতে।
‘তাহলে আমি বরং বাড়ি চলে যাই।’
‘যাও’ বলে উড়ন্ত চুমু ছুঁড়ে দিলাম তার দিকে। মেয়েটি রাগ করে চলে গেল। তবে কুকুরটিকে রেখে গেল গাছের তলায়। আমাকে শিক্ষা দিতে।
আমি কীভাবে রাত কাটালাম, আলিঙ্গন করলাম প্রত্যুষের আলোকে, কীভাবে কুকুরকে ফাঁকি দিলাম—সে এক আলাদা ইতিহাস। তবে সেই থেকে কোনো মেয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সময় অবধারিতভাবে জিজ্ঞেস করি, ‘কুকুর আছে?’
উত্তরে ‘হ্যাঁ’ শুনলে তৎক্ষণাৎ পাশের উঁচু কোনো গাছে চড়ে বসে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে শুরু করে দিই।
আমি বুঝতে পারি, লোকে আমাকে দেখে পাগল ভাবে, তবে ওই সময়ে নিজের ওপরে আমার নিয়ন্ত্রণ থাকে না—যেটাকে বলে আত্মরক্ষার সহজাত প্রতিক্রিয়া।
* রুশ ভাষায় এ জাতীয় প্রশ্নবোধক বাক্যে একেবারেই ব্যঙ্গার্থে পুশকিনের নাম ব্যবহূত হয়ে থাকে। আরও একটি উদাহরণ: ‘টেবিলে প্লেট রেখে উঠে গেলে যে! প্লেট ধোবে কে? পুশকিন?’
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০৭, ২০১১
Leave a Reply