সূর্য উজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছে আকাশে। পাখিরা গান গাইছে। প্রীতিকর সুবাস ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। আনাতোলি মাকুশকিন এবং আলা মুরাভিয়েভা পথ ধরে হাঁটছে, হাতে হাত ধরে।
‘শিগগিরই ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেব,’ ভাবছিল আনাতোলি। হয়তো আজই। সময় ঘনিয়ে এসেছে।…কেনই বা নয়? সে বুদ্ধিমতী, সুন্দরী, প্রচুর পড়াশোনা আছে, শরীরচর্চা করে, ড্রাগাসক্তি নেই।’
‘শিগগিরই ও বিয়ের প্রস্তাব দেবে আমাকে’, ভাবছিল আলা। ‘হয়তো আজই। সময় ঘনিয়ে এসেছে।…কেনই বা নয়? সে বুদ্ধিমান, সুদর্শন, প্রচুর পড়াশোনা আছে, শরীরচর্চা করে…পেশাও খুব সম্মানজনক। কোথাকার কোন লেখক বা মহাকাশচারী সে নয়। সে অ্যাকাউন্ট্যান্ট। আমাদের সময়ে সগর্বে উচ্চারণ করা যায় এই শব্দটি, একটা সময়ে “নব্য রুশ”* যেমন।’
আলা আড়চোখে তাকাল আনাতোলির দিকে। আনাতোলির নজর এড়াল না সেটা। সে আরও শক্ত করে আলার হাত জড়িয়ে ধরল।
‘শুধু কঞ্জুস যেন সে না হয়, আলা ভাবতেই থাকল। তেমন কারও সঙ্গে বিয়ে হলে জীবনটাই শেষ! কিন্তু কীভাবে যে এটা পরখ করে দেখব!’
একটু এদিক-ওদিক তাকিয়ে নিয়ে নরম স্বরে বলল, ‘তোলিক, আমার জন্য আইসক্রিম কেন না, প্লিজ।’
‘তোমার কী ধরনের পছন্দ, আলা?’ আদুরে স্বরে জানতে চাইল আনাতোলি।
‘তোমার যেমন ইচ্ছে’, আলা উত্তর দিল একটু কড়া স্বরে।
আনাতোলি ছুট লাগাল দোকানে এবং এক মিনিট বাদেই আইসক্রিম এনে দিল আলাকে। সেটি ছিল দোকানের সবচেয়ে দামি আইসক্রিম। আলার মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠল।
‘তবে এতে কিছুই প্রমাণিত হয় না’, সিদ্ধান্ত টানল আলা এবং আইসক্রিমে বার দুয়েক কামড় দিয়েই প্রায় আর্তনাদ করে উঠল, ‘উফ! দাঁতের ব্যথা শুরু হয়ে গেল!’
আইসক্রিমটি ফেলে দিল সে ডাস্টবিনে।
‘আনাতোলি, তুমি বরং আমাকে ফুল কিনে দাও। কী চমৎকার দিন! ফুল ছাড়া মেয়েদের পথে হাঁটাটা কেমন অশোভন লাগে না?’ আলা বলল রসিকতা করে।
আনতোলি দৌড় দিল ঝুড়িভর্তি ফুল নিয়ে বসে থাকা ফুলবিক্রেতার দিকে। নিয়ে এল বিশাল এক তোড়া।
‘আমার প্রিয় ফুল! ধন্যবাদ, তোলিক!’ খুশি হয়ে উঠল আলা। কিন্তু সে তো আনাতোলিকে পরখ করে দেখছে, সে কথা মনে পড়তেই যোগ করল, ‘তবে এই ফুলগুলো থেকে আমার অ্যালার্জি হয়।’
এবং ফুলগুলোও উড়ে চলল ডাস্টবিনে। আইসক্রিমের পাশে। দেখে আনাতোলির ভুরু কপালে উঠে গেলেও সে নীরব রইল।
‘ও কেমন যেন উশখুশ করল!’ আনাতোলির দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে ভাবল আলা। ‘নাকি সত্যিই সে কঞ্জুস? কীভাবে যে আরও একটু যাচাই করা যায়!’
এক শপউইন্ডোর সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। তারপর একটা হাতব্যাগ দেখিয়ে বলল, ‘কী দারুণ! এমন একটা হাতব্যাগের স্বপ্ন দেখে এসেছি সারাটা জীবন।’
আনাতোলি মুহূর্তের মধ্যে ঢুকে পড়ল দোকানে, পকেট হাতড়ে খুঁজে পেতে টাকা বের করে ব্যাগটা কিনে দিল আলাকে।
আলা সত্যিকারের মুগ্ধ হলো।
‘অনেক ধন্যবাদ,’ বলল সে। ‘হাতব্যাগের টাকা আমি তোমাকে অবশ্যই ফিরিয়ে দেব।’
‘কোনো দরকার নেই,’ আনাতোলি বলল দৃঢ়কণ্ঠে। ‘ওটা তোমাকে আমার উপহার।’
‘আসলেই সে ভালো ছেলে’, ভাবল আলা। ‘বুদ্ধিমান, সুদর্শন, প্রচুর পড়াশোনা আছে, শরীরচর্চা করে…এবং যদিও “নব্য অ্যাকাউন্ট্যান্ট”, তবে একেবারেই কঞ্জুস নয়। বিয়ের প্রস্তাব তো দেবে, আমি অতি অবশ্য তাকেই বিয়ে করব।’
‘কোনো পানীয় খাবে?’ প্রশ্ন করল আনাতোলি। ‘গলাটা একেবারে শুকিয়ে গেছে।’
‘না, তোলিক।’
আনাতোলি দোকানের সামনে গিয়ে পকেট থেকে কয়েকটি খুচরো পয়সা বের করল, কুলাল না দেখে বিক্রেতাকে মেট্রোভ্রমণের টোকেন নিতে অনুরোধ করল। বদলে পেল ছোট এক ক্যান ফানটা।
‘মেয়েটা আসলেই ভালো’, ভাবল আনাতোলি। ‘বুদ্ধিমতী, সুন্দরী, প্রচুর পড়াশোনা আছে, শরীরচর্চা করে…তবে বড়ই লোভী। সবই তার চাই! এবং একসঙ্গে!…তাই বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার আগে একটু অপেক্ষা করাটা উচিত হবে বা হয়তো ভালো হবে প্রস্তাব একেবারেই না দেওয়াটা…!’
* সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পরপরই হঠাৎ ধনী বনে যাওয়া শ্রেণীর লোকদের ‘নব্য রুশ’ বলা হতো।
অনুবাদ: মাসুদ মাহমুদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১
Leave a Reply