পূবের জানালা: প্রথম বাঙালি মুসলিম চিত্রকর কাজী আবুল কাসেম আত্মকথা \ সম্পাদক: সোহরাব হাসান \ ফেব্রুয়ারি ২০১০ \ বাঙালিসমগ্র জাদুঘর, ঢাকা \ প্রচ্ছদের আলোকচিত্র: মীর শামছুল আলম \ ৯০ পৃষ্ঠা \ ১৫০ টাকা
কাজী আবুল কাসেমকে আমি দু-এক দিন দেখেছিলাম পুরানা পল্টনের বাড়িতে, পিতা আব্বাসউদ্দীনের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন জানিনি, তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলার প্রথম বাঙালি চিত্রকর। আজ তাঁর আত্মকথা পূবের জানালা পড়ে মনে হলো, এমন সুন্দর আত্মকথা কমই পড়েছি। ফরিদপুর জেলার পাংশা থানার পারকুলা গ্রামে তাঁর জন্ম, কলকাতায় গিয়ে তিনি সংগ্রামের মাধ্যমে শিল্পী হলেন, মুসলমানদের রক্ষণশীল মেজাজের মধ্যে ছবি এঁকে খ্যাতি লাভ করলেন। বুলবুল ও সওগাত-এর মাধ্যমে তাঁর আত্মপ্রকাশ, পরবর্তীকালে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ‘দোপেয়াজা’ ছদ্মনামে কার্টুন এঁকে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনি শিল্পাচার্যদেরও গুরু।
কাজী আবুল কাসেম (১৯১৩—২০০৪), দীর্ঘ শুভ্র শ্মশ্রুধারী জাত শিল্পী। তাঁর অ্যালবাম থেকে নিজের আঁকা ছবি রঙিলা নাও, কলমিশাক, প্রকৃতি দুর্যোগ, মাগরিব, মুনাজাত, নারী, মেঘমেদুর বরষায়, নিজ আঁকা প্রচ্ছদ ও বেশ কয়েকটি সমসাময়িক ফটোগ্রাফ মুহূর্তে নিয়ে যায় একজন গুণী শিল্পীর মনোভুবনে। মা-বাবার স্মৃতি, শিক্ষকের কাছে ইলিশ মাছ আঁকতে যাওয়ার স্মৃতি, সেই সঙ্গে ফেলে আসা কলকাতার মাহে রমজানে গাওয়া গলিতে শোনা গজলের ছত্র: ‘মোমিনো, মাহে রমজান আয়া, বুলবুলে চমনমে মাতায়া, ঘুমন্ত রোজাদারদের স্মৃতি করে উচ্চকিত’—এসবের বিবরণ। মওলানা আজাদের স্মৃতি, দাঙ্গার স্মৃতি এবং তমদ্দুন মজলিশের আন্দোলনের স্মৃতি, সর্বশেষ ড. আহমদ শরীফ, শামসুর রাহমান, হুমায়ুন আজাদ—তাঁদের কথাও গল্পের মতো বলেছেন। এই বর্ণনা পাঠকদের আকৃষ্ট করবে বলে আমার বিশ্বাস।
শিল্পী কাজী আবুল কাসেম তাঁর আত্মকথায় লিখছেন: ‘আমি লেখক নই। সামান্য চিত্রকর; তাও আবার কমার্শিয়াল ছবি, ভুখা-নাঙ্গা ঘুচানোর তাগিদে।…কলকাতায় ছিলাম, অনেক বড় বড় লেখকের লেখা পড়েছি। মুগ্ধ হয়েছি, হেসেছি, কেঁদেছি।…এখানে শরৎচন্দ্র নেই, তারাশঙ্কর নেই,…কিন্তু বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। বার্ধক্যের দোরগোড়ায় আসতেই একে একে বেরিয়ে এলেন শওকত ওসমান, হুমায়ূন আহমেদ প্রমুখ সোনার চাঁদ লেখকেরা। এঁদের লেখা পড়ে আনন্দ আর শান্তি দুটোই ফিরে পেলাম আবার।’
যতই তিনি বলনু ‘আমি লেখক নই’, তিনি অবশ্যই লেখক। শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৭৮ সালে। বলতে পারি, পূবের জানালা যাঁরা পড়বেন, বিস্মিত হবেন। বইয়ের শেষে শিল্পী ও শিল্পীর আঁকা ছবিগুলো বইটির আকর্ষণ বাড়িয়েছে। শুধু বানানের দিকে আরেকটু নজর দিলে ভালো হতো।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ০৭, ২০১০
Leave a Reply