ভালেন্তিন আলেক্সান্দ্রভিচ পুজিকভের ঘুম ভাঙল। হাই তুললেন তিনি। অনুভব করলেন প্রচণ্ড হ্যাংওভার এবং বুঝে গেলেন, আজ তাঁর কাজে যাওয়া হবে না।
টেলিফোনের রিসিভার তুলে নিয়ে কাঁপা-কাঁপা হাতে পুজিকভ ডায়াল করলেন তাঁর বসকে।
বললেন, ‘ইয়ে…মানে…পুজিকভ বলছি। আমি…কী যেন বলে…আজ কাজে আসব না।’
‘বেশ,’ খুশি মনে বললেন বস। ‘তোমাকে ছাঁটাই করে দেব চাকরি থেকে।
‘না, না,’ ভীত হয়ে পড়লেন পুজিকভ। ‘আমাকে ছাঁটাই করা উচিত হবে না।’
‘অবশ্যই হবে!’
‘শুনুন, আমার…কী যেন বলে…যথাসংগত কারণ আছে।’
‘মেডিকেল সার্টিফিকেট নাকি?’
‘না, ঠিক তা নয়,’ ধাতস্থ হয়ে পুজিকভ বললেন, ‘আমি কাজে যাচ্ছি না রাজনৈতিক কারণে।’
‘রাজনৈতিক কারণ মানে?’
‘আমি জোরগলায় প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করছি।’
‘কোন প্রেসিডেন্টের?’
‘আমেরিকার।’
‘বাসায় বসে থাকো। আমি ডিরেক্টরের সঙ্গে আলাপ করে তোমাকে ফোন করছি।’
দশ মিনিট পরে তিনি ফোন করলেন পুজিকভকে।
বললেন, ‘শাবাশ! চালিয়ে যাও! তোমার রাজনৈতিক ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছেন ডিরেক্টর সাহেব।’
পুজিকভের ধর্মঘটের খবর পরদিন ছাপা হলো পত্রপত্রিকায়, প্রচার করা হলো রেডিও-টেলিভিশনে।
ধর্মঘটকারী পুজিকভের সমর্থনে দেশজুড়ে অর্থ ও খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ শুরু হলো। প্রথম কয়েক দিনেই তিনি পেলেন আট শ তিরিশ হাজার রুবল এবং বারো হাজার টন খাদ্যদ্রব্য।
আমেরিকার প্রশাসনমহলও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করল এ ব্যাপারে। পার্লামেন্টের অনির্ধারিত জরুরি অধিবেশনে অবিলম্বে পুজিকভের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। পুজিকভের দাবির বিকল্প হিসেবে রাশিয়াকে অনতিবিলম্বে আলাস্কা ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলো তাঁকে। প্রস্তাবটি যথেষ্ট মনে না হওয়ায় সঙ্গে এক বোতল ভোদকাও দাবি করে বসলেন তিনি। আমেরিকার পার্লামেন্টের পরবর্তী জরুরি অধিবেশনে এই বিষয় নিয়ে আলোচনার ঝড় বয়ে গেল। সারা পৃথিবী রুদ্ধশ্বাসে লক্ষ করতে লাগল ঘটনার বিকাশ। আমেরিকার অস্তিত্ব সম্পর্কে যাদের কোনো ধারণাও ছিল না, তারা পর্যন্ত এই সময় জানল আমেরিকার নাম।
সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে পুজিকভকে আমেরিকার বাজেট থেকে নিঃশর্তে এক বোতল হুইস্কি কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পাস হয়ে গেল।
পরদিন প্রায় এক কেজি খাদ্য সহযোগে বোতলটির পানীয় গলাধঃকরণ করে পুজিকভ অনুভব করলেন, কাজে যাওয়ার অবস্থা তাঁর নেই। বহু কষ্টে টেলিফোনের রিসিভার তুলে তিনি ডায়াল করলেন বসকে।
বললেন, ‘ইয়ে… মানে… পুজিকভ বলছি। আমি… কী যেন বলে… ইয়ে… মানে… আজ কাজে আসব না।’
‘কেন?’
‘জাপানের প্রেসিডেন্টকে আমার ঠিক পছন্দ হচ্ছে না।’
Leave a Reply