জীর্ণ এক হোটেলে দু’দিন বাস করে ৫০০ ফ্রাঁর বিল পেয়ে হোটেলমালিকের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম।
‘মাফ করবেন, মসিয়ে,’ আমি শুরু করলাম, ‘এই অস্বাভাবিক বিলের কারণটা কী? বিল দিয়েছেন চার দিনের, যদিও আমরা তিন দিনও থাকিনি। সোমবার রাতে এসে আজ সকালে হোটেল ছেড়ে যাচ্ছি।’
‘সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার—চার দিন!’ হিসাব বুঝিয়ে দিতে চাইলেন হোটেলমালিক।
‘সোমবারকে হিসাবে আনা উচিত নয় কোনোমতেই! আমরা এসে পৌঁছেছিলাম তো প্রায় মাঝরাতে! আর এখন বৃহস্পতিবার সবে শুরু হচ্ছে!’
‘তেমনই নিয়ম, মসিয়ে। দিন শুরু হয়ে গেলে সেটিও বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’
‘আচ্ছা, সেটা না হয় মানলাম, কিন্তু প্রতিদিন ইলেকট্রিসিটির জন্য দুই ফ্রাঁ করে ধরেছেন কেন, দয়া করে বুঝিয়ে বলবেন? যে দুই দিন আপনার এখানে ছিলাম, ইলেকট্রিসিটি তো একদমই ছিল না!’
‘হ্যাঁ, ইলেকট্রিসিটি ছিল না বটে, তবে সে কারণে আপনাদের কিন্তু একেবারেই ভুগতে হয়নি। আপনাদের মোমবাতি দেওয়া হয়েছে।’
‘হ্যাঁ, মোমবাতি ছিল, কিন্তু সেগুলোর দামও তো বিবেকের দংশন ছাড়াই ঢুকিয়ে দিয়েছেন বিলে!’
‘তা-ই তো দেওয়ার কথা! মোমবাতি পয়সা দিয়ে কিনতে হয় না?’
‘তাহলে ইলেকট্রিসিটি হিসেবের বাইরে রাখুন।’
‘তা তো সম্ভব নয়, মসিয়ে। ইলেকট্রিসিটি হলো দৈনন্দিন ব্যয়, আর মোমবাতি উপরি।’
‘কিন্তু আপনি কাগজ আর কালির বিল দিয়েছেন কেন? আমরা তো কিছুই লিখিনি।’
‘আপনারা লেখেননি বটে, তবে আপনাদের জন্য তো লেখা হয়েছে।’
‘কে লিখেছে?’ রাগ চড়ে গেল আমার।
‘আমরা। বুঝিয়ে বলি। আপনারা যখন এসে পৌঁছালেন, আমরা আপনাদের নাম-পদবি লিখেছি। তারপর প্রতিদিন লাঞ্চের সময় আপনাদের যে মেন্যু দেওয়া হতো, লক্ষ করে থাকবেন, সেটিও কাগজে। এবং এই যে বিল আপনাদের দেওয়া হয়েছে, সেটিও কাগজের ওপরই লেখা!’
আমাকে চূড়ান্তভাবে পর্যুদস্ত করল এই যুক্তি এবং আমি পরাজয় মেনে নিলাম।
পূর্ববর্তী:
« বিরোধী দলে গেলে যা যা বলবেনই
« বিরোধী দলে গেলে যা যা বলবেনই
পরবর্তী:
বিল গেটসের মেয়ের জামাই »
বিল গেটসের মেয়ের জামাই »
Leave a Reply