দীর্ঘশ্বাস ফেলে কপাল থেকে ঘাম মুছল সের্জ। বেজায় গরম পড়েছে। তার ওপরে আছে দুশ্চিন্তা। দু’দিন বাদে তার বস ডক্টর আহিল বোঁফুয়ার কর্মজীবনের কুড়ি বছর পূর্তি। সেই উপলক্ষে বসকে দামি কোনো উপহার দেওয়া কর্তব্য বলে সের্জ মনে করে।
কিন্তু পরম বিষাদের ব্যাপার এই যে, সের্জ খুব অবস্থাপন্ন নয়। সে তার সমস্ত নগদ টাকা গুনে দেখল। হায়! সব পকেট হাতড়ে জড়ো করতে পারল মাত্র ৫০ ফ্রাঁ। এই কটা টাকা দিয়ে কী কেনা সম্ভব? তবু হাল ছাড়ল না সের্জ। নির্ভীকভাবে ঢুকে পড়ল এক অ্যান্টিকের দোকানে। দোকানের মালিক সে সময় উঁচু গলায় কথা বলছিল এক ক্রেতার সঙ্গে: ‘শোনো, দ্যুরান, তুমি যদি তিন দিক দিয়েও আমার আত্মীয় হতে, তোমার অনুরোধ তবু আমি রাখতে পারতাম না। আমি কাউকে কোনো কিছু বাকিতে বিক্রি করি না।’
সের্জ মন দিয়ে শপউইন্ডো এবং দোকানের ভেতরে রাখা জিনিসগুলোর গায়ে সাঁটা দামের ট্যাগ দেখতে শুরু করল। জিনিসগুলো বড়ই মনোহর, তবে দাম তার পকেটে কুলানোর মতো নয় একেবারেই। সে প্রায় বেরিয়েই যাচ্ছিল দোকান থেকে, হঠাৎ তার চোখে পড়ল এক কোণে স্তূপ করে রাখা চিনেমাটির বেশ কিছু টুকরো। ‘এটা কী?’ জানতে চাইল সে দোকানের মালিকের কাছে।
‘ওহ্! এটা ছিল এক অনন্য জিনিস।’ কাতর কণ্ঠে বলল দোকানি। ‘নবযুগের সূচনাকারী মিনা ডাইন্যাস্টির আমলের মহামূল্য ফুলদানিটা আমার বজ্জাত বিড়াল ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।’
‘জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেননি কেন?’
‘সময় নেই। আর তার চেয়ে বড় কথা, এটা এখন একেবারেই মূল্যহীন।’
‘আমি যদি কিনি, কততে বেচবেন?’
‘পাঁচ ফ্রাঁ দিন, আমি আপনাকে সব প্যাকেট করে দিচ্ছি।’
‘আপনাকে ধন্যবাদ। এই নিন ১০ ফ্রাঁ। সবগুলো টুকরো বাক্সে ভরে আজই এই ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন: ডক্টর আহিল বোঁফুয়া, গ্রেনেল স্ট্রিট ১১১/৪, প্যারিস।’
‘চিন্তা করবেন না, সব ঠিকমতো করে দেব।’
প্রফুল্ল চিত্তে সের্জ বেরিয়ে এল দোকান থেকে। বস ভাবুক, সে তাঁর জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করেছে, আর বহনের সময় ফুলদানিটা ভেঙে গেলে তাতে তার কোনো দোষ তো নেই!
সোমবার সের্জ যখন কাজে এল, খুব ফুরফুরে মেজাজে ছিল সে। পাঁচ মিনিট পরে এসে পৌঁছালেন ডক্টর আহিল বোঁফুয়া। নিজের কেবিনে ঢোকার আগে এগিয়ে এলেন সের্জের কাছে।
‘আপনার পাঠানো উপহার পেয়ে আমি স্রেফ স্তম্ভিত হয়ে গেছি।’
‘আমি সত্যিই খুব খুশি,’ সের্জের চোখমুখ আলোকিত হয়ে উঠল। ‘ফুলদানিটি আসলেই অভিজাত…।’
‘কিন্তু আমাকে বলুন তো, প্রতিটি টুকরো আপনি কাগজ দিয়ে মুড়িয়েছিলেন কেন?’
পিয়ের দানিনোস
সংকলন ও অনুবাদ মাসুদ মাহমুদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২৯, ২০১০
Leave a Reply