বিভিন্ন পত্রিকায় পাঠকেরা তাঁদের সমস্যার কথা জানিয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছে চিঠি লেখেন। বিশেষজ্ঞরা সেসব সমস্যার সমাধান দেন। কিন্তু পশুপাখি নিয়ে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। পশুপাখিও যদি তাদের সমস্যার কথা বলত, তাহলে কেমন হতো? সেটাই কল্পনা করার চেষ্টা করেছেন পশুপাখির বন্ধু
আদনান মুকিত
আমি এবারের কোরবানির হাটে একজন প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু কেউ আমাকে ক্রয় করেনি। এই নিয়ে টানা তিন মৌসুম মালিক আমাকে হাটে এনেছে, কিন্তু কারও কাছে বিক্রি করতে পারেনি। আমার সব বন্ধু ভালো ভালো দামে বিক্রি হয়ে গেছে। এমনকি আমার চেয়ে বয়সে ছোটরাও বিক্রি হয়ে গেছে। আমিই শুধু দাম পেলাম না। বিশ্বাস করুন, আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি খাঁটি ঘাস খাওয়া গরু। তবু কেন কেউ আমাকে পছন্দ করছে না, সেটা এক রহস্য। এদিকে বয়সও বেড়ে যাচ্ছে। জুনিয়র গরুরা আমাকে দেখলে কটু কথা বলে, হাসাহাসি করে। এভাবে চললে মালিক হয়তো কোনো এক কসাইয়ের কাছে আমাকে বিক্রি করে দেবে, যা আমি চাই না। এসব ভেবে খুব চিন্তার মধ্যে আছি। মাঝে মাঝে গলার দড়িটায় ঝুলে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা হয়।
লালু
লালমনিরহাট
আচ্ছা, আমাকে বলো তো, তুমি কি কখনো বিক্রি না হওয়ার কারণগুলো খোঁজার চেষ্টা করেছিলে? তোমার বন্ধুরা বিক্রি হয়ে গেছে, অথচ কেন তোমাকে কেউ কিনছে না এ নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভেবে কারণগুলো বের করার চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে তোমার মালিকের সঙ্গে কথা বলো। আর যারা তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করো। তাদের বন্ধু হয়ে যাও। দেখবে, ওরা আর এমনটি করবে না। আর এত হতাশ হলে চলবে? আমাকে কথা দাও, ভবিষ্যতে কখনো আত্মহত্যার কথা ভাববে না। তোমার আরও ভালো কিছু করার সুযোগ রয়েছে। নিয়মিত ব্যায়াম করো, ঠিকমতো ঘাস খাও, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি একজন জিরাফ। বর্তমানে একটি চিড়িয়াখানায় কর্মরত আছি। সমস্যা হলো, আমার উচ্চতা অন্যান্য জিরাফের তুলনায় খুবই কম। ফলে আমি তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। এ নিয়ে সারাক্ষণ হীনম্মন্যতায় ভুগি। একা একা থাকি। আমার ধারণা, লম্বা লম্বা জিরাফের ভিড়ে পাবলিক আমাকে দেখতেই পায় না। আর পেলেও আমার উচ্চতা নিয়ে হাসাহাসি করে। অনেকে ভাবে আমি শিশু। গত মাসে একটি মেয়ে জিরাফকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, সে সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ, আমি খাটো। লম্বা হওয়ার জন্য আমি অনেক চেষ্টা করেছি, ব্যায়াম করেছি। কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি। আমি কী করব?
গিট্টু মিয়া
ঢাকা চিড়িয়াখানা
উচ্চতা কম হতেই পারে। এতে আপসেট হওয়ার কিছু নেই। সব সময় মনে রাখবে, তোমার সবচেয়ে বড় পরিচয় তুমি একজন জিরাফ। একা একা না ঘুরে সবার সঙ্গে মেশার চেষ্টা করো। দেখবে, এসব উচ্চতার কথা মাথায়ই আসবে না। আর যে মেয়ে জিরাফটি উচ্চতার কারণে তোমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে, তাকে ভুলে যাও। সে তোমাকে ভালোবাসেনি। সে শুধু তোমার উচ্চতাই দেখেছে। তোমারও যে একটা সুন্দর মন আছে তা দেখেনি। তুমি এসব নিয়ে ভেবো না। তবে লম্বা হওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলে দেখতে পার। বাজারে আজকাল হাই হিলের জুতা পাওয়া যায়। সেগুলোও পরে দেখতে পার। ভালো থেকো।
আমার নাম মুরগি। কদিন থেকেই আমি ঘুমের মধ্যে ভয়ংকর সব দুঃস্বপ্ন দেখছি। স্বপ্নে দেখি, দুজন মিলে ধারালো ছুরি দিয়ে আমাকে জবাই করছে। কখনো দেখি, আমাকে প্রচণ্ড তাপে গ্রিল করা হচ্ছে। এ রকম আরও ভয়ংকর টাইপের স্বপ্ন দেখি। দুঃস্বপ্নের পর আর ঘুমাতে পারি না। চুপচাপ বসে থাকি। আর ছুরি দেখলেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে। দুশ্চিন্তায় অনেক দিন ঠিকমতো ডিমও দিতে পারছি না। আমি কী করব? ও, আরেকটা কথা, আমি হরর মুভি দেখতে খুব পছন্দ করি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
দুঃস্বপ্ন ঘুমের মধ্যে দেখবে, এটাই স্বাভাবিক। না ঘুমালে দুঃস্বপ্ন দেখবে কী করে? যাই হোক, আমার মনে হয় বেশি বেশি হরর মুভি দেখার কারণেই তোমার এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। মুভির দৃশ্য আর পরিবেশগুলো তোমার মাথায় ঢুকে গেছে। তাই বারবার দুঃস্বপ্ন দেখছ। হরর ছাড়াও অনেক রকম মুভি আছে। আমাদের বাংলা সিনেমাগুলো খুব ফানি হয়, সেগুলো দেখো। ভালো লাগবে। আর চুপচাপ বসে না থেকে পরিশ্রম করো। ঠিকমতো খাও, ডিম দাও। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
সাপ হওয়ায় আমি গর্ত থেকে খুব একটা বের হই না। সেদিন বের হয়েছিলাম। আমার গর্তের পাশ দিয়ে একটা বেজি হেঁটে যাচ্ছিল। প্রথম দেখাতেই আমি বেজিটার প্রেমে পড়ে গিয়েছি। আমি ওকে অসম্ভব ভালোবাসি। ওকে না দেখলে আমার ভালোই লাগে না। আমি জানি, আমাদের পরিবার এই ভালোবাসা কোনো দিন মেনে নেবে না। কিন্তু মন থেকে ওকে সরাতে পারছি না। এদিকে বাসা থেকে বিয়ের জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছে। আমি কী করব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
তুমি খুব গুছিয়ে তোমার সমস্যার কথাটা লিখেছ বলে ধন্যবাদ। তোমার লেখাও চমৎকার। তবে তুমি কিন্তু বলোনি তোমার বয়স কত, বেজিটার বয়স কত, তার সঙ্গে তোমার কথা হয়েছে কি না— এসবও লেখোনি। এসব না জেনে কিছু বলাটা কঠিন। তবু বলছি, তুমি আগে বেজিটার সঙ্গে কথা বলো। সেও তোমাকে ভালোবাসে কি না, সেটাও দেখতে হবে। তারপর তুমি বাসার সবার সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করো। তাদের বোঝাও। আশা করি, তারা তোমার সমস্যাটা বুঝবে।
ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই অযত্ন আর অবহেলা ছিল আমার নিত্যসঙ্গী। বহু কষ্টে আমি বড় হয়েছি। কিন্তু প্রতিনিয়ত আমার মনে হয়, সবাই আমাকে অবহেলা করছে। মনে হয়, কেউ আমাকে পছন্দ করছে না। দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে খুব বেশি পরিশ্রম করতে পারি না। তাই অন্যদের তুলনায় আমি অনেক পিছিয়ে আছি। এ কারণে মনে হয় আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করব, পরে মনে হলো, ওটাও আমাকে দিয়ে হবে না। এখন আপনি বলুন, আমি কী করব?
পুটু
ছাগলনাইয়া।
প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত সব সন্তানের প্রতি সমান নজর দেওয়া। তুমি তিন নম্বর বলে হয়তো তোমার প্রতি তেমন নজর দিতে পারেনি। তবে তুমি কিন্তু ঠিকই বড় হয়েছ। ঘাস খাচ্ছ। আর কদিন পর হাটে উঠবে। অতএব, অতীতের কথা ভুলে যাও। কে বলেছে কিছু পার না? ম্যা ম্যা করে ডাকতে তো পার, সেটাই বা কম কি? তোমার যতটুকু মেধা আছে, তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করো। আর প্রচুর পরিমাণে সবুজ ঘাস খাবে। আজকাল গবাদি পশু মোটাতাজাকরণের জন্য অনেক ধরনের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। ওগুলো খেয়ে দেখতে পার। এগুলো তোমার দুর্বলতা দূর করবে। ভালো থাকো।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২৯, ২০১০
Leave a Reply